ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের চারপাশে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের দেখা গেছে।
এদিকে, কুয়েটে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ও সোহেল রানাকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
কুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ৫ দফা না মানলে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের আল্টিমেটাম
কুয়েটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করা যুবদল নেতা বহিষ্কার
কুয়েটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। কুয়েটে সংঘর্ষের পর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েট শাখার সদস্যসচিব জাহিদুর রহমান বলেন, তাদের পক্ষের অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক হবে।
সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে খুলনার খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
কুয়েট ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার তারা ক্যাম্পাস এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে। মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান তারা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। তারা ‘ছাত্ররাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটাই, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে আবাসিক হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে তা কুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।