লিনুর আত্মজীবনী প্রকাশ, বইমেলায় নেই ক্রীড়াঙ্গনের স্টল | বই নিউজ

লিনুর আত্মজীবনী প্রকাশ, বইমেলায় নেই ক্রীড়াঙ্গনের স্টল

মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রথম জাতীয় নারী টিটির ফাইনালে আপন বড় বোন হেলেনের কাছে ফাইনালে হারেন লিনু। যদিও পরবর্তীতে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একক, দ্বৈত, মিশ্র বিভাগে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন। একই বছরেই লিনুর টিটি ও সাইক্লিং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে।

#বই

বাংলাদেশের টেবিল টেনিসের (টিটি) রানি জোবেরা রহমান লিনু। ১৬ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে তিনি গিনেসবুক ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছিলেন। দেশের অন্যতম কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ তার জীবনের নানা বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন ‘জীবনজালের এপার-ওপার’ গ্রন্থে। এটি প্রকাশিত হয়েছে প্রথমা থেকে। ১৮২ পৃষ্ঠার এই বইয়ের মূল্য ৪০০ টাকা।

টিটি ও ক্রীড়াঙ্গনের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের নারী সমাজের অন্যতম পরিচিত মুখ লিনু। নিজের বই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফসল এই গ্রন্থ। খেলোয়াড় হিসেবে আমার না বলা অনেক কথা এখানে রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গন ছাড়াও ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের নানা ঘটনা রয়েছে এই আত্মজীবনীতে। নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে এটাই খুব সম্ভবত প্রথম আত্মজীবনী। সবাইকে বই পড়ার অনুরোধ রইল।’

মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রথম জাতীয় নারী টিটির ফাইনালে আপন বড় বোন হেলেনের কাছে ফাইনালে হারেন লিনু। যদিও পরবর্তীতে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একক, দ্বৈত, মিশ্র বিভাগে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন। একই বছরেই লিনুর টিটি ও সাইক্লিং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ক্রীড়া সংগঠক হয়ে সাইক্লিং, টেবিল টেনিস, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের বিভিন্ন পদে ছিলেন তিনি। ষাট বছর বয়সী দেশের অন্যতম কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ এখনও বিয়ে করেননি। তার আত্মজীবনীতে বিয়ে না করার বিষয়ও রয়েছে।

আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে লিনুর গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সাবেক ক্রীড়াবিদ ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রধান অতিথি হয়ে এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এই সময় সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া গবেষক দুলাল মাহমুদ, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক কামরুন নাহার ডানা, লিনুর বড় বোন সাবেক টিটি তারকা ও সংগঠক মুনীর মোর্শেদ হেলেনসহ ক্রীড়াঙ্গন ও লিনুর অনেক আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির অন্যতম অনুষঙ্গ অমর একুশে বইমেলা। সেই বইমেলায় ক্রীড়াঙ্গনের সুনির্দিষ্ট কোনো স্টল নেই। অথচ কলকাতায় চলমান বই মেলায় আইএফএ (পশ্চিম বাংলা ফুটবল এসোসিয়েশন) স্টল দিয়েছে। সেই স্টলে বই রয়েছে সাংবাদিক, ফুটবলারসহ অনেকেরই। সাবেক-বর্তমান অনেক ক্রীড়াবিদ সেই স্টলে সান্ধ্যকালীন আড্ডায় যোগ দেন। কলকাতার সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক মুনাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আইএফএ’র স্টল বইমেলায় বাড়তি বৈচিত্র্য এনেছে। আমারও কিছু গ্রন্থ তারা নিয়েছে। কলকাতা ফুটবল সংস্থার স্টল হলেও অন্য খেলারও বই রয়েছে এখানে।’

বাংলাদেশের বইমেলার অনেক ঐতিহ্য থাকলেও এখানে ক্রীড়া বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোনো স্টল নেই। তাই ক্রীড়াপ্রেমী পাঠকদের নানা স্টলে ঘুরতে হয় ক্রীড়াসংক্রান্ত বইয়ের জন্য। বইমেলায় একটি ক্রীড়া স্টল অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল মাহমুদ, ‘সাবেক খেলোয়াড়, সংগঠক, সাংবাদিক ও লেখক মিলিয়ে শতাধিকের বেশি মানসম্পন্ন বই রয়েছে। বই মেলায় ক্রীড়া সংক্রান্ত একটি স্টলে সকল বইয়ের সমাহার হলে ক্রীড়াঙ্গন যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি ক্রীড়াপ্রেমীরাও অনেক কিছু জানতে পারবে।’

তিন দশক আগে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বই মেলায় বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির স্টল ছিল। সেই স্টল বেশ সাড়া ফেলেছিল বলে মন্তব্য করলেন কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ কামরুন্নাহার ডানা, ‘দুলাল (দুলাল মাহমুদ) যখন সমিতির সেক্রেটারি তখন বইমেলায় স্টল ছিল। সেখানে লিনু ও আমি অনেকবারই গিয়েছি। মোনেম মুন্না, কায়সার হামিদ তখন সদ্য বিবাহিত। ওরাও সস্ত্রীক এসেছিল সেই স্টলে। লিপু ভাই, বাদলও (প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার ও সংগঠক) এসেছিল। ওই বছর মেলায় সমিতির স্টল ছিল অন্যতম আলোচিত।’ ক্রীড়া লেখক সমিতি পরবর্তীতে আর বইমেলায় স্টল দেয়নি। রিপোর্টারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গত দশ বছর যাবৎ বইমেলায় স্টল দিয়ে আসছে। সেই স্টলে অবশ্য ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখকরা বই দেন কদাচিৎ।

রাণী হামিদের ‘মজার খেলা দাবা’ বাংলাদেশের দাবাড়ু ও দাবাপ্রেমীদের এক রকম পাঠ্য, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য নুরুন্নবীর ‘রণাঙ্গনে ফুটবল’, বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর স্বাধীন বাংলা দল নিয়ে বই রয়েছে। সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া গবেষক দুলাল মাহমুদের ‘পাকিস্তান দলে বাঙালি খেলোয়াড়েরা’-সহ রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি ক্রীড়া নির্ভর বই। মাসুদ আলমের দেশের শীর্ষ ১০০ ফুটবলারদের নিয়ে ‘ফুটবলের গল্প, ফুটবলারদের গল্প’, ভলিবল সংগঠক আনিস রহমানের ভলিবল নিয়ে একাধিক এবং আরও বিভিন্ন খেলার খেলোয়াড়, সংগঠক ও সাংবাদিকদের ক্রীড়া বিষয়ক গ্রন্থ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছরই বাড়ছে বই প্রকাশের সংখ্যা।

বইমেলা আয়োজিত হয় বাংলা একাডেমির অধীনে। যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হলেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অথবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) একটি স্টলে ক্রীড়াঙ্গনের নানা বই থাকতে পারে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেরই নিজস্ব প্রকাশনা ক্রীড়াজগত রয়েছে। ১৯৭৬ সাল থেকে পাক্ষিক ক্রীড়া ম্যাগাজিন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক বিষয়ের দলিল।

বইমেলায় স্টল যেমন নেই, তেমনি দুর্বল ক্রীড়া লাইব্রেরিও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের লাইব্রেরিতে ক্রীড়া সংক্রান্ত বইয়ের চেয়ে ডিকশনারির সংখ্যাই বেশি। দেশের আরেক শীর্ষ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের লাইব্রেরিতে আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন, স্যুভেনিরে ভরপুর। অলিম্পিকে আলাদা লাইব্রেরি থাকলেও দেশের দুই শীর্ষ ফেডারেশন ফুটবল ও ক্রিকেটে অবশ্য সেটাও নেই। ক্রীড়া লেখক ও সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসজেএ ও ক্রীড়া লেখক সমিতির ছোট পরিসরে লাইব্রেরিতে সদস্যদের প্রকাশিত বই, খেলাধুলার আইনকানুন, ইতিহাস সম্পর্কিত এবং নিজেদের বিভিন্ন প্রকাশিত স্যুভেনির রয়েছে।

#বই