এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের দাবি | মতামত নিউজ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের দাবি

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে বোঝায় সেইসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে মূল বেতন স্কেলের শতভাগ পান। সরকারি শিক্ষকদের মতো বাড়ী ভাড়া, মেডিক্যাল, পেনশন, উৎসব ভাতা ও বদলির ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি, যা কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিশ্চিত করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে রয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আংশিক সরকারি সহায়তা পান। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে বোঝায় সেইসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি কোষাগার থেকে মূল বেতন স্কেলের শতভাগ পান। সরকারি শিক্ষকদের মতো বাড়ী ভাড়া, মেডিক্যাল, পেনশন, উৎসব ভাতা ও বদলির ব্যবস্থা নেই।

বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একাধিকবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বর্তমানেও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী ফোরামের ব্যানারে শিক্ষকরা প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত মানবন্ধন, মিছিল, অনশন, সচিবালয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন যা একটা রাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক বিষয়। যে শিক্ষকদের থাকার কথা শ্রেণিকক্ষে, পাঠদানে সে স্থলে কেনো অর্ধদিবস কর্ম বিরতি দিয়ে আজ তাদেরকে রাস্তায় থাকতে হবে? জাতির বিবেককে জাগ্রত করে এসব নিয়ে ভাবতে হবে। এসব নিরসনের আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের স্বার্থে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি। কেনোনা আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকরা এখনো সরকারি-বেসরকারি, এমপিও, নন-এমপিওসহ বিভিন্ন শ্রেণির উপাধিতে পরিচিত, যার মূল কারণ হচ্ছে আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করে করে মোট মাধ্যমিক শিক্ষার ৯৫ শতাংশ। যারা বেসরকারি পর্যায়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিরাট একটি অংশ পরিচালনা করে সেসব শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও পেনশন নিয়ে কাজ করে হতাশা। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিকে অনেক পিছিয়ে তারা। যদিও তাদের নিয়োগ পরীক্ষা অত্যন্ত কঠোর হয়। একই দেশে একই কারিকুলামে পাঠদান করেও শিক্ষাব্যবস্থায় এক দেশ দুই নীতির মতো দুই ধরনের বেতন ভাতায় বৈষম্য বিরাজ করছে।

শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় সর্বক্ষেত্রে আধুনিক ধ্যান-ধারণার প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষকতায় বেতন ভাতা বৈষম্য কমিয়ে ভারসাম্য আনতে হবে। বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও মানবিকতা সম্পন্ন দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে হবে। আর এই মহান দায়িত্বটির বেশির ভাগ যাদের কাছে ন্যস্ত তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা না গেলে শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ অধরাই থেকে যাবে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষকরা সেই মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী রাখেন। তাই তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ কেবল শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই নয়, বরং সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যও জরুরি। সরকার যদি এই দাবিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে এবং বাস্তবায়ন করে, তাহলে দেশের শিক্ষা খাত আরো সমৃদ্ধ হবে। শিক্ষকরা আগ্রহ ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)