এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের দাবি | মতামত নিউজ

পাঠকের কলাম এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের দাবি

সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় তাদের ভাতা ও সুবিধা অনেক কম হওয়ায় পেশায় মানসিকভাবে আত্মনিয়োগ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

#এমপিও #সরকারিকরণ #জাতীয়করণ

একটি জাতির উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি শিক্ষা। আর শিক্ষক হচ্ছেন সেই উন্নয়নের প্রধান কারিগর। কিন্তু বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষকদের, বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক, সামাজিক ও পেশাগত নিরাপত্তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ।

সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় তাদের ভাতা ও সুবিধা অনেক কম হওয়ায় পেশায় মানসিকভাবে আত্মনিয়োগ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও জাতীয়করণ সময়োপযোগী দাবি হিসেবে সামনে এসেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বর্তমানে বাংলাদেশের হাজার হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। যদিও তারা সরকারি বেতন কাঠামোর আওতায় ন্যূনতম বেতন পান।

তারা চিকিৎসা ভাতা পান মাত্র ৫০০ টাকা, যা একটি প্রাথমিক চিকিৎসার খরচও বহন করতে পারেন না। উৎসব ভাতা শতভাগ না হওয়ায় সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। অন্যদিকে, অবসরকালীন সুবিধাও সীমিত, যার ফলে শিক্ষকরা বার্ধক্যে গিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

বিভিন্ন ভাতার সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়: ১. বর্তমানে দেয়া ২৫ শতাংশ বাড়িভাড়া নগর ও মফস্বলের বাস্তবতা অনুযায়ী অত্যন্ত অপ্রতুল। এটি শিক্ষকদেরকে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে।

২. ৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা দিয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো বা ওষুধ কেনা প্রায় অসম্ভব। ৩. উৎসবের সময় অন্যান্য পেশার মানুষ পূর্ণ উৎসব ভাতা পেলেও শিক্ষকরা বঞ্চিত থাকেন, ফলে পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানে পিছিয়ে পড়েন। ৪. অবসরকালীন সুবিধা না থাকায় শিক্ষকরা সারা জীবনের শ্রমের পরেও আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, যা নতুন প্রজন্মকে এই পেশায় আগ্রহী হতে নিরুৎসাহিত করে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেসব কারণে জাতীয়করণ প্রয়োজন: ১. শিক্ষকতাকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যা জাতীয়করণের মাধ্যমে সম্ভব। [inside-ad-2

২. আর্থিক নিরাপত্তা শিক্ষকগণকে শ্রেণিকক্ষে আরো মনোযোগী ও উদ্যমী করে তোলে। ৩. জাতীয়করণের ফলে শিক্ষক পেশার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ ও সম্মান বাড়বে। ৪. সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে এমপিওভুক্ত বেশ প্রভাব রাখতে পারে। যেমন- ১. আর্থিক নিশ্চয়তা থাকলে শিক্ষকরা ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে মুক্ত থেকে পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারেন।

২. বেতন ও ভাতা পর্যাপ্ত হলে শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। ৩. যখন পেশাটিতে নিরাপত্তা ও সম্মান থাকবে, তখন মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশাকে পছন্দ করবেন। ৪. আর্থিক ও মানসিক স্থিতিশীলতা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ককে গভীর করে, ফলে শিক্ষণ পরিবেশ উন্নত হয়।

এর কিছু সামাজিক প্রভাবও আছে। যেমন-১. দক্ষ ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষকদের দ্বারা মানসম্পন্ন শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎকে গড়ে তোলে। ২. দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে তারা কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে, ফলে বেকারত্ব কমে। ৩. একক কাঠামোতে সব শিক্ষক থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে। ৪. সুশিক্ষিত সমাজই পারে একটি প্রগতিশীল, মানবিক ও সহনশীল জাতি উপহার দিতে।

শিক্ষকদের অবহেলা করে কোনো জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও জাতীয়করণের উদ্যোগ তাদের মানসিক প্রশান্তি, আর্থিক নিরাপত্তা ও পেশাগত মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারে। এর ফলে শিক্ষকরা আরো দায়িত্বশীল, নিবেদিত ও উদ্যমী হয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে পারবে। শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে হলে এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।

এখন তাহলে যা করা যেতে পারে তা হলো-সব এমপিওভুক্ত শিক্ষককে শতভাগ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান নিশ্চিত করা। শিক্ষকদের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে ধাপে ধাপে জাতীয়করণের কার্যক্রম শুরু করা উচিত।

শিক্ষকদের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও যুক্তিসঙ্গত বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা, যা তাদের পেশার মর্যাদা ও প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলিত করে এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে শিক্ষকদের মর্যাদা ও জীবনমান উন্নয়নের ওপর। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ ভাতা ও জাতীয়করণ শুধু একটি দাবি নয়, এটি সময়ের দাবি ও শিক্ষার মানোন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত। শিক্ষক সমাজকে সম্মান জানিয়ে, তাদের দাবি বাস্তবায়ন করে আমরা একটি আলোকিত, শিক্ষিত ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

লেখক: প্রভাষক, রোকোনদ্দিন ইসলামিয়া সালেহিয়া ফাজিল মাদরাসা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

#এমপিও #সরকারিকরণ #জাতীয়করণ