পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

পাঠ্যপুস্তকের পেছনে থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ও নানা শ্লোগান সংযুক্ত করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ পড়েছে। স্থান করে নিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয় ও নতুন কিছু গল্প-কবিতা।

#বই #গণঅভ্যুত্থান

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ইতি ঘটেছে আওয়ামী জমানার। সব কিছুতেই এখন পরিবর্তনের পরশ। সংস্কারের সেই হাওয়া লেগেছে শিক্ষার পালেও। আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমের আলোকে পরিমার্জিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের নতুন বই পৌছে যেতে শুরু করেছে। শিগগিরই সব শিক্ষার্থী সব বই পাবেন। এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ৪১ বিশেষজ্ঞ ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করেছেন। কি কি পরিবর্তন করছেন তারা? পরিবর্তনের পর কেমন হলো নতুন বই? কি কি বাদ গেলো? নতুন করে যোগ হলো কি কি?

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

পরিবর্তনের হাইলাইটস

পাঠ্যপুস্তকের পেছনে থাকা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি এবার বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি ও নানা শ্লোগান সংযুক্ত করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বাদ পড়েছে। স্থান করে নিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয় ও নতুন কিছু গল্প-কবিতা।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। সেলিনা হোসেনের পাঁচটি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুটি, সৈয়দ শামসুল হকের একটি, রোকনুজ্জামান খানের একটি, নির্মলেন্দু গুণের একটি ও সাবেক আমলা কামাল চৌধুরীর একটি লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে।

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

কী হলো প্রাথমিকে

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে এ বছর সাতটি গদ্য-পদ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে যুক্ত করা হয়েছে নতুন আটটি গদ্য-পদ্য।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি যুক্ত করা হয়েছে। ছাপা বইয়ে নাহিয়ান নামে এক শহীদ ছিলেন। বিতর্ক দেখা দিলে এনসিটিবি তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া পাঠ্যবইয়ের অনলাইন সংস্করণে নাহিয়ানের জায়গায় শহীদ নাফিসার নাম যুক্ত করেছে।

তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হয়েছে। একাত্তরের ইতিহাসের নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর অবদান স্থান পেয়েছে। ছবিসহ তাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর ‘রাজনীতিতে নারী’ শীর্ষক প্রবন্ধে যুক্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী তুলে দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে জাতীয় চার নেতার জীবনী। বাদ গেছে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও।

প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে পিঁপড়া ও পায়রার গল্প। ৪১ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘এ’ কারের উদাহরণে রোদের তেজের পরিবর্তে মেঘের ছবি দেওয়া হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়’ অধ্যায়ের নাম বদলে করা হয়েছে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’। সেখানে শুরুতে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটি দৃশ্য। ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা উল্লেখ থাকলেও এখন তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

অনেক অধ্যায়ে উদাহরণের পর একই জিনিসের পরিচয় আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। যেমন– অ-তে অশোক ফুল ফুটেছে ভাই। এরপর লেখা, অশোক একটি ফুলের নাম। আগে লেখা ছিল শৈবাল ভাসে। এখন সেটি নদীতে শৈবাল ভাসে করা হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে সংক্ষিপ্ত লেখাকে বোঝার সুবিধার্থে বড় করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হয়েছে সিংহ আর ইঁদুরের গল্প। শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’ বাদ দিয়ে যোগ করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ওপর ‘দুখু মিয়ার জীবন’। ‘পহেলা বৈশাখ’ গদ্য করা হয়েছে ‘নববর্ষ’। বইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় পদ্মা সেতুর ছবি পরিবর্তন করা হয়েছে। নববর্ষ অধ্যায়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে নববর্ষের অন্য ছবি যুক্ত করেছে। তবে ইংরেজি ও গণিত বইয়ে তেমন পরিবর্তন পাওয়া যায়নি।

তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে সংযোজন হয়েছে ‘ঘাসফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলা’। বাদ গেছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গদ্য ‘সেই সাহসী ছেলে’। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে লেখা ‘আমাদের চার নেতা’। ইংরেজি বইয়ের শেষ অধ্যায়ে লেখা গদ্য ‘অ্যা ওয়ান্ডারফুল বয়’ বাদ গেছে। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের জীবনী ছিল।

চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ পড়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মমতাজউদ্‌দীনের লেখা ‘বাংলার খোকা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’। যোগ হয়েছে ‘টুনুর কথা’ ও রজনীকান্ত সেনের কবিতা ‘স্বাধীনতার সুখ’। ‘মোবাইল ফোন’ নামক গদ্যও বাদ পড়েছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে ‘বই পড়তে অনেক মজা’। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রসঙ্গ কথা বাদ দেওয়া হয়েছে। সূচিপত্র ও অধ্যায়ের ১ ও ১০ নম্বর পৃষ্ঠায় ছিল বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। এটি পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী। বইটির এক নম্বর অধ্যায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈচিত্র্য ও সামাজিক পরিবেশের ওপর প্রকৃতির প্রভাব, দুই নম্বর অধ্যায়ে সামাজিক বিভিন্নতা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, চার নম্বর অধ্যায়ে সামাজিক অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার, সাত নম্বর অধ্যায়ে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী অনুচ্ছেদের আগের অংশের সঙ্গে কয়েকটি লাইন সংযোজন করা হয়েছে।

১৫ নম্বর অধ্যায়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধ অংশে কয়েকটি লাইন সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে। বইয়ের দুই নম্বর অধ্যায়ে নারী ও পুরুষ, ছয় নম্বর অধ্যায়ে অধিকাংশের মত গ্রহণ, ১২ নম্বর অধ্যায়ে ঘূর্ণিঝড় এবং ১৫ নম্বর অধ্যায়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অনুচ্ছেদে একটি করে লাইন যুক্ত হয়েছে। আর তিন নম্বর তথা মানচিত্র অধ্যায়ে একটি মানচিত্র সংযোজন করা হয়েছে। আট নম্বর অধ্যায়ে ‘সামাজিক সম্পদ’ অনুচ্ছেদের নাম ‘সামাজিক প্রতিষ্ঠান’, ‘আরও কিছু রাষ্ট্রীয় সম্পদ’ অনুচ্ছেদের নাম ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ: প্রাকৃতিক’ এবং ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘এই বনভূমি বাংলাদেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে’– এই অংশকে লেখা হয়েছে ‘এই বনভূমি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’। ১১ নম্বর অধ্যায়ে ‘বঙ্গোপসাগর’কে লেখা হয়েছে ‘বঙ্গোপসাগর একটি উপসাগর’।

১৪ নম্বর অধ্যায়ে ৭২ ও ৮৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘মধ্যযুগ’কে লেখা হয়েছে ‘মুসলিম শাসনামল’। ১৫ নম্বর অধ্যায়ে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অংশে ‘বঙ্গবন্ধু’র পরিবর্তে ‘মওলানা ভাসানী’র নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন? অংশটুকু নতুন সংযোজন।

পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। এর বাইরে সূচিতে তেমন কোনো সংযোজন-বিয়োজন নেই।

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

মাধ্যমিক যেমন হলো

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া সাতটি গদ্য হলো– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, কবীর চৌধুরীর ‘পয়লা বৈশাখ’, জহির রায়হানের ‘বাঁধ’, সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ ও ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘তথ্যপ্রযুক্তি’। অবশ্য একই বইয়ে জহির রায়হানের ‘একুশের গল্প’ এবং জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত গদ্য যুক্ত করা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ ও ‘লাইব্রেরি’ গদ্য দুটি আগের মতোই রাখা হয়েছে। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’ গদ্য বাদ গেলেও রাখা হয়েছে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’। ‘নিয়তি’ বাদ দিলেও রাখা হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘১৯৭১’। চারটি কবিতা বাদ দিলেও যুক্ত হয়নি একটিও। বাদ দেওয়া চার কবিতা হলো– কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’। কাজী নজরুল ইসলামের অন্য দুটি কবিতা ‘মানুষ’ ও ‘উমর ফারুক’ ঠিকই রয়েছে।

নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বই থেকে ইউনিট ওয়ান হিসেবে থাকা ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’ এবং ‘গ্রাফিতি’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে।

পরিবর্তনের পর নতুন পাঠ্যবই

নতুন বইয়ে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান

পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম–দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে মোট আটটি কনটেন্ট বা বিষয় স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা ছবি ও গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর লেখা ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক একটি লেখা স্থান পেয়েছে। এতে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ইংরেজদের নির্যাতন থেকে এ দেশের কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে যুদ্ধ করে শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীর থেকে শুরু করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কথা স্মরণ করা হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর প্রতিকৃতিও স্থান পেয়েছে লেখায়।

ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বইয়ে দুটি গদ্য যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ নামে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ওপর লেখা একটি সংকলিত লেখা রয়েছে। এই লেখায় ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ছবি যে আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল, সেই সব কথা তুলে ধরা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে অসংখ্য গ্রাফিতি আঁকার কথাও আছে এই লেখায়।

সপ্তম শ্রেণির ‘সপ্তবর্ণা’ বইয়ে হাসান রোবায়েতের লেখা ‘সিঁথি’ নামে একটি কবিতা যুক্ত হয়েছে। এই কবিতা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওপর লেখা।

সপ্তম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে আলোচিত দুই তরুণ র‍্যাপার সেজান ও হান্নানের নাম এসেছে। বইয়ের ‘আ নিউ জেনারেশন’ নামে একটি পাঠে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাঁদের গানের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের ওপর সংকলিত লেখা ‘গণ অভ্যুত্থানের কথা’ স্থান পেয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে এ দেশের বড় তিনটি গণ-অভ্যুত্থানের কথা। এগুলো হলো উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে হওয়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।

অষ্টম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে নারীর ভূমিকা নিয়ে ‘উইমেনস রোল ইন আপরাইজিং’ শীর্ষক একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। এতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকার কথা রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীদের ছবিও আছে এই অধ্যায়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি বহনকারী ভ্যান একজন নারী কীভাবে আটকে দিয়েছিলেন, সেই ছবিও স্থান পেয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের কথাও আছে এই অধ্যায়ে।

নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য’ নামের পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ নামে একটি সংকলিত প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। এতে সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট হওয়াসহ নানা অনিয়মের চিত্রও বর্ণনা করা হয়।

নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘গ্রাফিতি’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এর শুরুতে রাজধানীর মেট্রোরেলের পিলারে আঁকা ‘হামার বেটাক মারলু কেনে?’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদী লেখা যুক্ত রয়েছে। শহীদ নূর হোসেনের বুকে লেখা ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ শীর্ষক ঐতিহাসিক ছবির অনুকরণে আঁকা একটি গ্রাফিতিও রয়েছে এই অধ্যায়ে।

#বই #গণঅভ্যুত্থান