নতুন পাঠ্যপুস্তক: ভুল তো রয়েই গেলো | মতামত নিউজ

নতুন পাঠ্যপুস্তক: ভুল তো রয়েই গেলো

পাঠ্যবইয়ে ভুল দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জন্য পাঠ্যপুস্তকসমূহের পরিমার্জিত সংস্করণও এর ব্যতিক্রম নয়। একাধিক পরিমার্জিত সংস্করণের মাধ্যমে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে এখনো অনেক ভুল চোখে পড়ে। বেশ কিছু ভুল পাঠ্যপুস্তকের প্রথম প্রকাশের সময় থেকে শুরু করে এখনো আছে, এগুলো কোনো সংস্করণেই সংশোধন করা হয়নি।

পাঠ্যবইয়ে ভুল দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জন্য পাঠ্যপুস্তকসমূহের পরিমার্জিত সংস্করণও এর ব্যতিক্রম নয়। একাধিক পরিমার্জিত সংস্করণের মাধ্যমে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে এখনো অনেক ভুল চোখে পড়ে। বেশ কিছু ভুল পাঠ্যপুস্তকের প্রথম প্রকাশের সময় থেকে শুরু করে এখনো আছে, এগুলো কোনো সংস্করণেই সংশোধন করা হয়নি।

আবার এমন ভুলও আছে, যা ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জন্য পরিমার্জিত সংস্করণের পূর্বে ছিলো না। ভুলগুলোর মধ্যে তথ্যগত ভুল আছে, আছে বানান-সংক্রান্ত ভুল ও নানান অসংগতি।

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের কথাই ধরা যাক। এ বইয়ের ‘রানার’ কবিতার কবি-পরিচিতি অংশে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ৩০ শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ ও মৃত্যু ২৯ বৈশাখ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘মাত্র একুশ বছর বয়সে কবি মৃত্যুবরণ করেন’। কবির জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ অনুযায়ী তিনি একুশ নয় বরং বিশ বছর বয়সে মারা যান। বইটির ১৩২ নং পৃষ্ঠায় ‘বার্নার্ডশ’ এর স্থলে ‘বার্নার্ড শ’ হবে অর্থাৎ ‘বার্নার্ড’ ও ‘শ’ দুটি আলাদা শব্দ।

একই বইয়ের ১৮৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘ঝরনার গান’ লেখা হলেও সূচিপত্রে ‘ঝর্ণার গান’ লেখা রয়েছে, ৬ নং পৃষ্ঠায় ‘ম্যাজিষ্ট্রেট’ লেখা রয়েছে যার শুদ্ধরূপ ‘ম্যাজিস্ট্রেট’। বইটির ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধের পাঠ-পরিচিতিতে লেখা রয়েছে ‘‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচিত্র প্রবন্ধ  গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। এটি তার বিচিত্র প্রবন্ধ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত’। এখানে পরপর দুই বাক্যে একই বক্তব্য দুবার এসেছে। আবার ২৪৫ নম্বর পৃষ্ঠায় হাসান হাফিজুর রহমান সম্পর্কে ‘১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন’-দ্বারা কী বোঝানো হচ্ছে সেটা পরিষ্কার নয়। একই বছর কীভাবে উল্লেখিত দুটি ডিগ্রি নেয়া যায়? কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’ কবিতার পাঠ-পরিচিতি অংশে ‘সকিনা বিবি’ কিন্তু কবিতায় রয়েছে ‘সাকিনা বিবি’।

নবম ও দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে যা করা হয়েছে তা সব ভুলকে ছাপিয়ে যাবে।বইটির ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জন্য পরিমার্জিত সংস্করণের ৬৬ নং পৃষ্ঠায় তিন জোড়া গ্রাফ রয়েছে কিন্তু বর্ণনার সঙ্গে এই তিন জোড়া গ্রাফের কোনোই সম্পর্ক নেই। পূর্বের সংস্করণে থাকা এক জোড়া গ্রাফের পরিবর্তে তিন জোড়া গ্রাফ সংযোজন করলেও গ্রাফের বর্ণনায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। একই বইয়ে মৌলের ভরসংখ্যাকে বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বিভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে। ৩৪৯, ৩৫০ ও ৩৫১ নং পৃষ্ঠায় মৌলের প্রতীকের ডান সাবস্ক্রিপ্ট হিসেবে (যেমন C , U  ইত্যাদি), ১১৮ নং পৃষ্ঠায় মৌলের প্রতীকের ডান সুপারস্ক্রিপ্ট হিসেবে (Kr ও Ba ) আবার ১১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় চিত্রের মধ্যে মৌলের প্রতীকের বাম সুপারস্ক্রিপ্ট হিসেবে ( Kr ও  Ba) ভরসংখ্যাকে দেখানো হয়েছে। একই শ্রেণির রসায়ন বইয়ের ৪১ নং পৃষ্ঠা অনুযায়ী ‘ভরসংখ্যা প্রতীকের বাম পাশে ওপরের দিকে লেখা হয়’। তাই পুরো বইতেই এই রীতিতে অর্থাৎ ভরসংখ্যাকে মৌলের প্রতীকের বাম সুপারস্ক্রিপ্ট হিসেবে লেখা উচিত।

নবম ও দশম শ্রেণির রসায়ন বইয়ের ৪০ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রোটনের ভর একবার 1.67×10  g আরেকবার 1.673×10  g উল্লেখ আছে। একই পৃষ্ঠায় টেবিল 3.05-এ চার্জকে SI এককে কিন্তু ভরকে CGS  এককে দেখানো হয়েছে যদিও ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পৃথিবীর সকল দেশে SI পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় (দেখুন ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ৫ম পৃষ্ঠায়)। বইটির ৫১ নং পৃষ্ঠার নিচের দিকে মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে উল্লেখিত ‘একটি কার্বন 12 আইসোটোপের পারমাণবিক ভরের   অংশ’ হতে ‘পারমাণবিক’ শব্দটি বাদ যাবে। আবার ৫২ নম্বর পৃষ্ঠায়  ‘কার্বন-12 আইসোটোপে পারমাণবিক ভরের   অংশ হলো 1.66×10 g’-এ ভুল আছে তিনটি।

প্রথমত, ‘আইসোটোপে’ নয় হবে ‘আইসোটোপের’; দ্বিতীয়ত, ‘পারমাণবিক’ শব্দটি বাদ যাবে আর তৃতীয়ত, ‘1.66×10 ’ এর পর কোনো space না দিয়েই একক ‘g’ লেখা; কারণ রাশির মান প্রকাশ করার জন্য সংখ্যা লিখে space দিয়ে এককের সংকেত লিখতে হয় (পৃষ্ঠা নম্বর ১৯, নবম ও দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বই)।

বইটির কোথাও ‘গ্রাম’কে ওজনের একক আবার কোথাও ভরের একক লেখা হয়েছে। ১১৪ নং পৃষ্ঠা অনুযায়ী ‘গ্রাম’ ভরের একক কিন্তু ১৩৭, ১৩৮ ও ১৩৯ নং পৃষ্ঠা অনুযায়ী ‘গ্রাম’ ওজনের একক। প্রকৃতপক্ষে ওজনের একক নিউটন, যা অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের ৬৯ নং পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ আছে।

আমার আলোচনা মাত্র কয়েকটি বইয়েই সীমাবদ্ধ রাখলাম। এই বইগুলোতে আরো ভুল থাকতে পারে। তা ছাড়া অন্যান্য বইয়ে তো ভুল আছেই। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে ১৪৭টি ভুলের সংশোধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়। এবারের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে থাকা ভুলগুলো খুঁজে বের করে গতবারের মতো এবারও ভুলের সংশোধনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষক, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)