সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এতে করে মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাবেন বলে মনে করেন তিনি।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তার এ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আজ শেষ দিন।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তিতে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় দেখা যায়, এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অনেক পরীক্ষার্থী সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। তাদের লেখাও তেমন ভালো নয়। এতে ধারণা করা যায়, শুধু এমসিকিউর মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্যপ্রার্থী বাছাই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। এমসিকিউ ও মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন বন্ধ ও নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে।
এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সাতটি প্রস্তাব দেন ডিসিরা। মৌলভীবাজারের বাদ পড়া ৭২টি চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের প্রস্তাব দেন এই জেলার ডিসি। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে ৯২টি চা-বাগানের মধ্যে ৭২টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ না হওয়ায় চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানরা সরকার প্রদত্ত উপবৃত্তিসহ অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এসব শিক্ষার্থীর পক্ষে বাগানের বাইরে দূরবর্তী কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হয় না। এসব স্কুলে সরকারিভাবে উপবৃত্তি দেওয়ার সুযোগ না থাকায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা অর্থাভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত না করেই স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ইংরেজি ও আইসিটি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব দেন মাগুরার ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তার যুক্তি—বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করা সম্ভব হয়। সাধারণ শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের মতো পারদর্শী হন না। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের ফলে শিক্ষার্থীরা হালনাগাদ ও প্রাসঙ্গিক শিক্ষায় প্রবেশ করতে পারবে, যা তাদের আধুনিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত করবে।
জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় মনিটরিং সেল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন গাইবান্ধার ডিসি। তার ভাষ্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান ঠিক নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকরা অন্তঃকোন্দল ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, যা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানকে বাধাগ্রস্ত করে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ কমিটি গঠনের কথাও জানান ডিসি।