জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই। গুণগত শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সিলেবাস সংস্কার, আইসিটি, কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও ভবিষ্যৎ ভাবনা সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স কক্ষে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন লেখক ও শিক্ষাবিদ শারমিন আহমেদ। সেমিনারে প্রধান আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, শিক্ষার অবকাঠামো ও উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভিশন, মিশন যদি না থাকে তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে কী অবস্থা হবে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট দেয়া হয় এবং অনেকেই বেকার থেকে যায় কারণ বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রয়োগ নেই। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কোনো কারিকুলাম বাস্তবায়ন, কারিগরি শিক্ষা, আইসিটি শিক্ষার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়নি। সেজন্য বর্তমান উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে দেশের গুণীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন দিক নির্দেশনার উদ্দেশ্যই এ সেমিনারের আয়োজন।
উপাচার্য আরো বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স আছে তার সঙ্গে যদি টেকনিক্যাল কোর্স যুক্ত করতে পারি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই কোর্সকে সমন্বয় করে সার্টিফিকেট দিতে পারি তাহলে গালফ স্টেট ও ইউরোপের কান্ট্রিগুলোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা জব সেক্টরে অগ্রাধিকার পাবে। শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার করতে পারলেই আমাদের দেশ ১০০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এর লক্ষে সহজেই পৌঁছাতে পারবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি, লেখক ও শিক্ষাবিদ শারমিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমেদের সময়কালে শিক্ষার সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের ভিশন হতে হবে শিক্ষার মাধ্যমে মানব সম্পদ তৈরি করা। সেজন্য কল্যাণমুখী শিক্ষা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা হবে সার্বজনীন। শহর ও গ্রামে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই কারিকুলামের আওতায় আনতে হবে।
এই সেমিনারের প্রধান আলোচক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন বলেন, উচ্চ শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনা, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, বেসিক এডুকেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই শহর এবং গ্রামের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকা যাবে না। এ শিক্ষার মধ্যে পারিপার্শ্বিকতা থাকবে, আচার-আচরণে সহিষ্ণুতার, মানবিক মূল্যায়ন এবং কল্যাণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত), রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।