অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের চতুর্থ ধাপের ভাইভা চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এমপিও শিক্ষক পদে চাকরি প্রত্যাশীরা প্রতিদিনই মুখোমুখি হচ্ছেন ভাইভা বোর্ডের। কী প্রশ্ন করা হচ্ছে তাদের, তারাই বা কী উত্তর দিচ্ছেন। তাদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই সহায়ক হবে ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের। তাই দেশের একমাত্র শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার এই বিশেষ আয়োজন। ভাইভা বোর্ড থেকে বের হওয়া প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সুতীর্থ বড়াল ও সাবিহা সুমি।
ঝালকাঠির মো. নূরনবী বলেন, প্রথমে আমাকে সমাবেশ করে দেখাতে বলা হয়েছে। ভাইভা বোর্ডের স্যারেরা অনেক আন্তরিক ছিলেন। ধন্যবাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে। শিক্ষাডটকমের ভাইভা বিষয়ক ভিডিয়ো দেখে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।
সমাবেশ পারি কিনা তা জিজ্ঞেস করা হয়েছে। কোথা থেকে পড়াশোনা করেছি? এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন পিরোজপুরের সুপ্রদয় বেপারী। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে ধন্যবাদ জানান।
কুড়িগ্রামের কাকলি রায় বলেন, আমার ভাইভার অভিজ্ঞতা ভালো। আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয়েছে বেদ সম্পর্কে। আমি দশ মিনিটের মত ভাইভা বোর্ডে ছিলাম। স্যারেরা অনেক আন্তরিক ছিলো।
নাটোর থেকে ভাইভা দিতে এসেছেন মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, কী কী বিষয়ের ওপর অনার্স-মাস্টার্স করেছি সেটা জিজ্ঞেস করা হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা বিষয় থেকে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। ফুটবল খেলা থেকে কিছু প্রশ্ন করেছে।
আমাকে প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয়েছে মহাভারতের রচয়িতা কে? যুধিষ্ঠির কে ছিলেন? রাবণের স্ত্রীর নাম কী? এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে দিনাজপুরের সাগর চন্দ্রের কাছে। তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে ধন্যবাদ জানান।
বরিশালের আবু নোমান বলেন, আমাকে প্রথমে ভালোভাবে সমাবেশ করে দেখাতে বলেছেন। আমার ভাইভা ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে।
বরিশালের নাজমুল আলম ভাইভা বোর্ডের প্রশংসা করে বলেন, আমাকে সমাবেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। প্র্যাকটিকালে সমাবেশ, জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, শপথ-এগুলো করে দেখাতে বলেছে।
ভাইভা ভালো হওয়ার কথা জানিয়েছেন হবিগঞ্জের কেকা দাস। তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সংস্কৃত মানে কী? মহাভারত সম্পর্কে বলেন। রামায়ণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে।
পঞ্চগড় থেকে ভাইভা দিতে এসেছেন প্রমিতা রানী দাস। তিনি বলেন, প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয়েছে মথুরার রাজা কে ছিলেন? হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কী? কৃষ্ণ কে? ব্রহ্মার জন্ম কোথা থেকে হয়েছে?
ভাইভা বোর্ড অনেক আন্তরিক ছিলো বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড়ের নিরুপমা রানী। আমাকে প্রথম প্রশ্ন করা হচ্ছে সীতা কে? সীতার বাবার নাম কী? কার সঙ্গে সীতার বিয়ে হয়েছে? দশরথের কয়জন স্ত্রী ছিলো?- আমাকে এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ভাইভা বিষয়ক ভিডিয়ো দেখে উপকৃত হয়েছি। অ্যাথলেটিক্স থেকে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। ফুটবলের ওজন কত?- এমন অভিজ্ঞতার কথা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন বরিশালের মোহাম্মদ আল আমিন।
বরিশালের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে। তিনি বলেন, আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে ভলিবলের এন্টেনা সম্পর্কে। এছাড়া কাবাডি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইভার ৫৮তম দিনে মোট দশটি বোর্ডে দুই ব্যাচে অংশ নেন চাকরিপ্রার্থীরা। এদিন স্কুল পর্যায়ের হিন্দু, খ্রীষ্টধর্ম ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা ছিলো। প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টায় ও দ্বিতীয় ব্যাচের পরীক্ষা বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়।
গতকাল বুধবার ৩১৫০০৮২৭২ থেকে ৩১৮০০০৭২৬ রোল নম্বরধারীদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা অংশ নেন। ৫৮তম দিনে মোট ৬০০ জন প্রার্থীর ভাইভা নেয়া হয়। গত ৫ জানুয়ারি থেকে চতুর্থ ধাপের এই ভাইভা শুরু হয়েছে। এ ধাপের ভাইভা চলবে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আজ বৃহস্পতিবার ৩১৮০০০৭২৮ থেকে ৩১৮০০২৯২১ রোল নম্বরধারীদের মধ্যে ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে তৃতীয় ধাপের ভাইভা পরীক্ষা ৫ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। ১৪ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়, যা শেষ হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।
এর আগে গত ২৭ অক্টোবর প্রথম ধাপের ভাইভা শুরু হয় এবং ১৩ নভেম্বর প্রথম ধাপের ভাইভা শেষ হয়। পর্যায়ক্রমে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী ভাইভায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। ভাইভায় অংশগ্রহণের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে অবশ্যই সব শিক্ষা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ ও লিখিত পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড সঙ্গে আনতে হবে। যেহেতু এবার ভাইভার জন্য আলাদা প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি, তাই লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রই মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র হিসেবে গণ্য হবে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে মৌখিক পরীক্ষা শুরুর তারিখ জানানো হয়। গত ১৪ অক্টোবর অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গড় পাসের হার ছিলো ২৪ শতাংশ।
তার আগে গত ১৫ মে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে গড় পাসের হার ছিলো ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। স্কুল ও কলেজ পর্যায় মিলিয়ে মোট পাস করেন চার লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন চাকরিপ্রার্থী। গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারিতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন।