ঢাকার নবাবগঞ্জের ১৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫টি চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। এছাড়া ১০৯টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা উভয়ই চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, প্রধান শিক্ষক নেই—এমন স্কুলের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জালালপুর উদয়ন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘীরপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঠানকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সরেজমিন দেখা গেছে, এসব বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক অবকাঠামো বেশ নড়বড়ে।
কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক শূন্য বিদ্যালয়গুলোয় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। এতে একদিকে স্কুল পরিচালনা, অন্যদিকে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা—সব একসঙ্গে করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। এতে দিন দিন প্রাথমিক শিক্ষা ঝিমিয়ে পড়ছে। খারাপ হচ্ছে শিক্ষার মান।
গোল্লা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কিশোর কুমার রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সহকারী থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না হওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে।
অভিভাবকদের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের ভিত শক্ত করার প্রথম স্তর হলো প্রাথমিক শিক্ষা। সেখানে কোনো ত্রুটি থাকলে যে কোনো শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
অভিভাবক মো. কাজল বলেন, প্রধান শিক্ষক-শূন্যতায় প্রাথমিক শিক্ষার গুণমান নষ্ট হবে। তিনি দ্রুত শূন্যপদগুলোয় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অনুরোধ জানান। আরেক অভিভাবক রাহেলা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাগো পুলা-মেয়ারা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। হেড স্যার না থাকলে ক্যামনে পড়ব। আমাগো তো বড় স্কুলে পড়ানের ট্যাকা নাই।’
পাঠানকান্দা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তাহমিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, এখানে আড়াই বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষক না থাকলে প্রধান শিক্ষককেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি অনেক ক্লাস নিতে হয়। এই স্কুলে দুই ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। তাই সব এক হাতে করতে হয় এখন। দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। ক্লাসে মনোযোগ দেওয়াটাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর।
নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আল মেরাজ বলেন, পদোন্নতি বন্ধ থাকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপেছে। অতি শিগগির এ সমস্যার সমাধান না হলে সংকট আরও বাড়বে।
এবিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রাশেদ মামুন বলেন, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৩৫ স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও ১০৯ জন সহকারী শিক্ষকের পদ ফাঁকা আছে। যেসব বিদ্যালয়ে এ সংকট রয়েছে, সেগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে আশা করছি।