হিসাবের নথিপত্র নিয়ে উপাধ্যক্ষ ৭ মাস লাপাত্তা | কলেজ নিউজ

হিসাবের নথিপত্র নিয়ে উপাধ্যক্ষ ৭ মাস লাপাত্তা

দীর্ঘ সাত মাস ধরে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. নুরুন্নবী আকন্দের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে ছয়টি নোটিশ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

#কলেজ #শিক্ষার্থী #অধ্যক্ষ

দীর্ঘ সাত মাস ধরে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. নুরুন্নবী আকন্দের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে ছয়টি নোটিশ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় কলেজের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নথিপত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুলাই থেকে কলেজের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রসহ অনুপস্থিত রয়েছেন উপাধ্যক্ষ নুরুন্নবী আকন্দ।

কলেজ সূত্র জানায়, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ পান মো. নুরুন্নবী আকন্দ। পরে ২৭ জন প্রভাষককে ডিঙিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখল করেন এবং নির্বাচিত অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন আখন্দকে তার পেটোয়া বাহিনীর সহায়তায় কলেজ থেকে বের করে দিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো উপেক্ষা করে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর প্রভাব খাটিয়ে কোনো নিয়োগ পত্র ছাড়াই ১৯৯৯ সালের ২২ ডিসেম্বর তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে প্রভাষক পদে অবৈধভাবে নিয়োগ পান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুন্নবী আকন্দ। তৃতীয় বিভাগে বি কম (পাস) ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এম কম পাস করায় ১৯৯৪ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে রেজুলেশন জাল করে তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলীর প্রভাব খাটিয়ে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি এমপিওভুক্ত হন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৮ মার্চ কলেজের অধ্যক্ষের পদ দখল করেন তিনি এবং একচ্ছত্র রাজত্ব চালান ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। অভিযোগে জানা যায়, স্ত্রী ছাড়া তিনি অন্যদের কাছ থেকে জমি অথবা ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি নিয়োগ দিয়েছেন। বিভাগীয় প্রধান করার ক্ষেত্রেও তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০-১২ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে কয়েকজন শিক্ষককে ২০-২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কাল্পনিক রেজুলেশনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পদার্থবিদ্যা বিভাগের বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থী কলেজে যোগদান করার পর প্রভাষিকা মোমেনা খাতুন চাহিদা মোতাবেক টাকা না দেওয়ায় কোনো প্রকার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, নিয়োগবোর্ড, রেজুলেশন ছাড়াই জনৈক শাহিদুলকে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে কাল্পনিক কমিটির নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়োগ বোর্ড জনৈক আলমগীর হোসেন প্রথম হলেও চাহিদার ২০ লাখ টাকা না দেওয়ায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী আপন ভাতিজিকে জমির বিনিময়ে নিয়োগ দেন নুরুন্নবী আকন্দ। ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষিকা সেলিনা পারভীনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাদ দিয়ে উকিল জামাতা খন্দকার মাহমুদুল হাসান শিপুলকে মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন তিনি। কলেজ জাতীয়করণ হওযার পর চাহিদার ১০ লাখ টাকা না দেওয়ায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফেরদৌসীকে জাতীয়করণে অন্তর্ভুক্ত করেননি। শুধু তাই নয়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে, জাল নথি ও সনদ দাখিল করে ওই বিভাগে দুজন প্রভাষককে নিয়োগ করেন অধ্যক্ষ। এ সব অনিয়ম প্রসঙ্গে প্রভাষক ফেরদৌসী সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করলে অধ্যক্ষ নুরুন্নবী ও তার সহযোগীরা তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন।

অভিযোগ আছে উপাধ্যক্ষ নুরুন্নবীর কার্যকালে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮৭ জন শিক্ষকের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষকের এনটিআরসিএর নিবন্ধন ভুয়া। দুদকে ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুন্নবী আকন্দ ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিয়োগবাণিজ্য, ঘুষবাণিজ্য এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কলেজের অর্থ লোপাট করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনি ৪৪ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা কলেজ ফান্ড থেকে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি গত জুলাই থেকে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ রেজুলেশন বই, আয়-ব্যয়ের হিসাবের খাতাসহ লাপাত্তা রয়েছেন।

এ ব্যাপারে নুরুন্নবী আকন্দের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। শ্রীপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধীসহ ৫টি হত্যা মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষা প্রফেসর পিয়ারা নার্গিস জানান, নুরুন্নবী আকন্দ গত বছরের ২২ জুলাই থেকে কলেজের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্রসহ অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি তহবিলের ৫০ কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে পলাতক রয়েছেন। তাকে এ পর্যন্ত ছয়টি কারণ দর্শানোর লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ও বিভিন্ন সরকারি দফতরে সাবমিট করা কাগজ মূলে এবং কলেজের অপসারিত অধ্যক্ষ মো. তোফাজ্জল হোসেন আখন্দের মামলার রায়ে জানা যায় নুরুন্নবী আকন্দের নিয়োগ প্রমোশন ও সকল কর্মকাণ্ড বেআইনি।

#কলেজ #শিক্ষার্থী #অধ্যক্ষ