অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণ, বিচারকদের বদলি, পদায়ন-পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা বিধানের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচারক-আইনজীবীসহ অংশীজনের দীর্ঘদিনের দাবি। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কাজটি সঠিকভাবে করতে এই সচিবালয়ের বিকল্প নেই। এটি প্রতিষ্ঠায় রয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাও। ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়েও পৃথক সচিবালয় স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ দায়িত্ব নিয়েই পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় জোর দেন। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৭ অক্টোবর একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।
এজন্য ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৪’ নামে একটি অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করা হয়। এবার এই অধ্যাদেশের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এর আগে পাঠানো ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়নপূর্বক এর নাম পরিবর্তনক্রমে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে।সোমবার এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বা পূর্বানুমোদনক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ, নির্দেশ, পরিপত্র, নীতিমালা বিষয়ে সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারবে মর্মে খসড়া অধ্যাদেশে বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর, বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণ প্রদানকালে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। তিনি অভিভাষণে ঘোষণা করেন, সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের জন্য তিনি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গত ২৭ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যথাযথরূপে পালনের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন ও বিচার বিভাগকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইতিবাচক সহযোগিতায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো প্রস্তুতকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনকে আরও অর্থবহ করতে প্রধান বিচারপতির সদয় নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ইতোপূর্বে প্রেরিত ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৪’ এর খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়নপূর্বক উহার নাম পরিবর্তনক্রমে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়ায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং ইকুইপমেন্ট নির্ধারণ; বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদ সৃজন, বিলোপ, বিন্যাস, নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা, ছুটি, চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ; অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির কাঠামো এবং ইকুইপমেন্ট নির্ধারণ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমান খসড়ায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের কার্যাবলি বণ্টন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতিকে প্রয়োজনীয় বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়ায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের বাজেটে বিচার কর্ম-বিভাগে নিযুক্ত সবার বেতন-ভাতাদির পাশাপাশি দেশের বিচার প্রশাসন পরিচালনার প্রশাসনিক ব্যয়, অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির উন্নয়ন ব্যয়, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করার বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এ ছাড়া খসড়া অধ্যাদেশে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়কে অধস্তন আদালত, তৎসংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কমিশন, ইনস্টিটিউট, একাডেমি প্রভৃতির উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।