এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ সোমবার দুপুরে এ কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এর আগে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় উপজেলার ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগে বলা হয়, কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকালে বিঝারী ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গুরুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন পরীক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেন।
পরীক্ষার্থী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বুলবুল তাকে ১০ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
এ বিষয়ে ইউএনও সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনো ধরনের অনৈতিক আচরণ বা হয়রানি মেনে নেওয়া হবে না।’
এর আগে গত ১০ এপ্রিল থেকে সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। শুরু থেকেই নকল ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
১৪ এপ্রিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় এসএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের ‘আমাদের চৌহালী গ্রুপ’ নামে একটি গ্রুপে উল্লিখিত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রটি আপলোড করা হয়। চৌহালী উপজেলা প্রশাসন তৎপর হলে বেলা ১১টার দিকে গ্রুপ থেকে আপলোডকারীরা ওই প্রশ্নপত্র সরিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তোলপাড় শুরু হলে গ্রুপের অ্যাডমিন মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি আইনে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ দেন চৌহালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এ ঘটনার প্রভাব পরীক্ষায় পড়েনি বলে দাবি করেন ইউএনও নিজেই।
এছাড়া কুমিল্লাতেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে গত বৃহস্পতিবার এবারের এসএসসি শুরুর দিনেই বাংলা প্রথমপত্রে ২২ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন ইংরেজি প্রথমপত্রে আরো ১০১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিন ময়মনসিংহে পরীক্ষার্থীর হাতে মোবাইল ফোন পাওয়া যাওয়ায় কেন্দ্রসচিবসহ তিন শিক্ষক ও চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ঝালকাঠিতে ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ১৩ শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার সময় একটি কক্ষের অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের সামনেই বই খুলে উত্তর লিখতে দেখা গেছে। ওই ভিডিয়ো প্রকাশের পর আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার নারান্দিয়ায় তোফাজ্জল হোসেন তুহিন কারিগরি স্কুল কেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট এ ইউ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেয়াল টপকে পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহের ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। গতকাল মঙ্গলবার ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষার সময় দেয়াল টপকে নকল সরবরাহের হিড়িক পড়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে এমন অবস্থা চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ কুমার বসাক বলেছেন, ‘বহিরাগতরা বিচ্ছিন্নভাবে নকল সরবরাহের চেষ্টা করেছিলো। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে তারা তা পারেনি। পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে পরীক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বন থেকে বিরত না করে উল্টো সহযোগিতা করা এবং পরীক্ষার কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জামালপুর এবং ঝালকাঠির কয়েকটি কেন্দ্রের শিক্ষককে।
এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার গণিত পরীক্ষা চলাকালে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যান্ড বিএম কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুর রহমান। অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- কুলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম, এড. নুরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল আলিম এবং একই স্কুলের শিক্ষক সুলতান মাহমুদ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে শিক্ষকদের সামনে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়ার সময় গতকাল ঝালকাঠিতে ১২ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং এক কেন্দ্রসচিবসহ ১৩ পর্যবেক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে জেলার নলছিটি উপজেলায় ভরতকাঠী জি আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চার পরীক্ষার্থী ও আট শিক্ষক, নলছিটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই পরীক্ষার্থী, কাঠালিয়া উপজেলায় কাঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসায় এক পরীক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক, আমুয়া চাঁদমিয়া ফাজিল মাদরাসায় তিন পরীক্ষার্থী ও তিন শিক্ষক এবং রাজাপুর উপজেলায় রাজাপুর পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাকিলা রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বন করায় জেলায় ১২ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং এক কেন্দ্রসচিবসহ ১৩ শিক্ষককে আগামী পরীক্ষার সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে ময়মনসিংহে পরীক্ষা চলাকালে দায়িত্বে অবহেলা, খাতা বদল ও নকল রাখার দায়ে কেন্দ্রসচিবসহ চার শিক্ষক এবং তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পৃথকভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গতকাল ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি ও কারিগরি বোর্ডের গণিত পরীক্ষা চলাকালে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।
এর মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রসচিবসহ চার শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা।
তিনি জানান, পরীক্ষার হলে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল পাওয়া গেছে। এটি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সুস্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা। এছাড়াও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় কেন্দ্রসচিবসহ চার শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা আগামী পাঁচ বছর কোনো পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
বহিষ্কৃতরা হলেন- ভাইটকান্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মো. বিল্লাল হোসেন এবং উপজেলার পাঁচ নম্বর সদর ইউনিয়নের ঠাকুর বাকাই ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান, নিলুফার ইয়াসমীন এবং গোলাম রেজুয়ান।
ভাইটকান্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের হল সুপার শিক্ষক সিকদার জানান, ভোকেশনাল শাখার কয়েকজন ছাত্র সম্ভবত জানালা দিয়ে জব্দ হওয়া মোবাইলগুলো পরীক্ষার হলে নিয়েছিল। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে এগুলো ধরা পড়ে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
অপরদিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কাতলাসেন কামিল মাদরাসায় এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে দুই শিক্ষার্থীকে খাতা বদল এবং এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নকল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ওই তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত এই শিক্ষার্থীরা হচ্ছে- ইয়াসিন আরাফাত সনি, কাউছার মাহমুদ এবং ছাব্বির মাহমুদ শামীম।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার লাখপুর শিমুলিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ডিজিটাল ডিভাইসে (মোবাইল) প্রশ্নপত্র আদান-প্রদানের দায়ে দুজনকে ১৫ দিনের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মু. আবদুর রহিম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের কবির উদ্দিনের ছেলে দিনার আহমেদ (২০) ও শিমুলিয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে রিফাত হোসেন (১৯)।