শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত, তবু পিছু হাঁটছে এনটিআরসিএ! | স্কুল নিউজ

শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত, তবু পিছু হাঁটছে এনটিআরসিএ!

শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত তবু পিছু হাঁটছে এনটিআরসিএ!

#শিক্ষক #নিয়োগ #এনটিআরসিএ

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক পদ শূন্য। এগুলোর এক লাখের কিছু বেশি পদ এমপিওভুক্ত। অবশিষ্টগুলো ননএমপিও। মোট প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকরা প্রতিদিনই অবসরে যাচ্ছেন, আর শূন্যপদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ননএমপিও শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট হিসেব কোনো সংস্থা রাখার প্রয়োজন মনে করে না অদ্যাবধি। যদিও ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে চালু হওয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইনে বলা হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা। এমপিও ও নন-এমপিওর বৈষম্য করা হয়নি। কারণ, সব প্রতিষ্ঠানই শুরুতে ননএমপিও থাকে। তারপর ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত হয়। তাই এনটিআরসিএ আইনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো বেসরকারি হাইস্কুল, কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসায় যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে এনটিআরসিএ নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করে চলছে। তারা শুধু এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের পরীক্ষা নিয়ে চলছে। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত, তবু পিছু হাঁটছে এনটিআরসিএ!

শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত, তবু পিছু হাঁটছে এনটিআরসিএ! এদিকে শম্ভুক গতিতে নজিরবিহীনভাবে নেওয়া হচ্ছে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রায় ৮৪ হাজার প্রার্থীর ভাইভা। সময়ের দাবি, দ্রুত প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, কিন্তু এনটিআরসিএ যেনো পেছনের দিকে হাঁটছে। অজুহাত- জনবল নেই। তাই আধাবেলা মাত্র ছয়শ জন প্রার্থীর ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। অথচ এনটিআরসিএর সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহিল আজম দেড় বছর আগে জনবলের চাহিদা দিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। গত বছরের মধ্য সেপ্টেম্বরে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় মো. মফিজুর রহমানকে। সাইফুল্লাহিল আজমের দেওয়া জনবলের চাহিদা তিন মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত আনে এনটিআরসিএ। যুক্তি দেখানো হয়, জনবল বৃদ্ধির দরকার নেই।

এভাবে বছরব্যাপী ভাইভা নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষক পদ প্রার্থীকে ৩৫ বছর বয়সের মারপ্যাঁচে ফেলার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রার্থীদের। কিন্তু চাকরির ভয়ে প্রকাশ্যে তারা কিছু বলছেন না। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান (অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক) পদে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। হয়তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এনটিআরসিএ জানাবে, ‘জনবল সঙ্কটে’ এই দায়িত্ব নেওয়া এখনই সম্ভব হচ্ছে না।” এমন আশঙ্কাই করছেন শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের একজন প্রার্থী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এত কম সংখ্যক এবং অর্ধবেলা ভাইভা নেওয়ার নজির এনটিআরসিএর ইতিহাসে নেই। তবু তা-ই চলছে গত অক্টোবর থেকে।

‘এই অবস্থা দেখে হার্টের অসুখ বেড়ে চলছে আমার মতো অনেক হবু শিক্ষকের। কারণ, আমাদের সামনে ১৭তম নিবন্ধন উত্তীর্ণ ও পয়ত্রিশোর্ধব শত শত প্রার্থীর হাউমাউ কান্না আর কাকুতি মিনতির দৃশ্য চোখে এখন ভাসছে’, যোগ করেন তিনি।

আরেকজন প্রার্থী বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কতিপয় আমলার গোঁয়ার্তুমি ও অবহেলায় ১৭তম নিবন্ধন উত্তীর্ণ শত শত প্রার্থী নিয়োগ সুপারিশ পাননি। নিবন্ধন পরীক্ষার সব ধাপ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তারা। কিন্তু হেলেদুলে অবহেলা করে নিয়োগ সুপারিশের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলেন তখন তাদের বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গেছে। অথচ সময়মতো সব উদ্যোগ নিলে এমনটা হতো না।’

দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাইভা নেওয়ার জন্য একাধিকবার স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন অষ্টাদশ নিবন্ধন প্রার্থীরা। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মৌখিকভাবে তাগাদাও দিয়েছেন। কিন্তু এনটিআরসিএ অনড়!

জানা যায়, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় ৮৪ হাজার জনের ভাইভা শুরু হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। এই ভাইভা চলতি বছরের মে মাসে শেষ হতে পারে।

গত ১৪ অক্টোবর অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গড় পাসের হার ছিলো ২৪ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ১৫ মে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে গড় পাসের হার ছিলো ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। স্কুল ও কলেজ পর্যায় মিলিয়ে মোট পাস করেন চার লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন চাকরিপ্রার্থী। গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারিতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন।

বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভাইভা বোর্ড সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্রুত পরীক্ষা শেষ করে নিয়োগ সুপারিশ করার সব ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচাতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান পদের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বও এনটিআরসিএকে নিতে হবে। কোনো গোয়ার্তুমি চলবে না।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#শিক্ষক #নিয়োগ #এনটিআরসিএ