ভ্যানচালককে খাস কামরায় বেঁধে পেটা*লেন ম্যাজিস্ট্রেট | বিবিধ নিউজ

ভ্যানচালককে খাস কামরায় বেঁধে পেটা*লেন ম্যাজিস্ট্রেট

অভিযুক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমি মোটরসাইকেল নিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ি যাই। মোটরসাইকেলে আমার স্ত্রীও ছিল। হঠাৎ একটি কুকুর আমাদের তাড়া করে। এতে আমরা অনেক ভয় পেয়ে দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পাই।

#বিবিধ

নিজের খাস কামড়ায় এক ভ্যানচালককে ডেকে এনে বেঁধে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ীর এক নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন ভ্যানচালক আফজাল খাঁ (৩০)। তবে থানার ওসি বলেন, এ ঘটনায় কোন এজাহার পাননি তিনি।

শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে কুকুরের তাড়া খেয়ে ক্ষোভে এই ভ্যানচালককে নিজের খাস কামড়ায় ডেকে হাত বেঁধে মারপিট করেছেন জানা গেছে। আফজাল খাঁ রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাড়াইজুড়ি গ্রামের মৃত আনছের খাঁ'র ছেলে। তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এজাহারে আফজাল খাঁ বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের শশুরবাড়ি আমাদের এলাকায় হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে তার শশুরবাড়িতে আসেন। গত ৩০ জানুয়ারি তিনি তার পরিবার নিয়ে শশুরবাড়ির এলাকায় হাটাচলা করা অবস্থায় একটি বেওয়ারিশ কুকুর তাকে ধাওয়া করে। তিনি পরবর্তীতে ওই বেওয়ারিশ কুকুরের মালিকের খোঁজ করলে অজ্ঞাত ব্যক্তি কুকুরটি আমার বলে তাকে জানায়। পরে তিনি থানা পুলিশের মাধ্যমে আমাকে তার সেরেস্তায় ডেকে পাঠান। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে আমি ও আমার মেঝ ভাই মো. সাহেব আলী খান জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় তার চেম্বারে গেলে তিনি আমাকে ওই কুকুরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

আমি তাকে বলি, কুকুরটি আমার না এবং কুকুরটি কার তাও আমি জানি না। তখন তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার সেরেস্তায় থাকা একটি দড়ি দিয়ে আমার হাত পিঠমোড়া করে বাঁধেন এবং আমাকে একটি চেয়ারের উপর হামু দিতে বলেন। আমি তার কথা মতো চেয়ারের উপরে হামু দিলে তিনি একটি কাঠের রুল দিয়ে আমার পশ্চাৎদেশসহ পিঠে আনুমানিক ৩০টি আঘাত করেন।

এতে আমার পশ্চাৎদেশসহ পিঠে রক্তজমাট নিলাফুলা ব্যথাযুক্ত জখম হয়। তখন সুমন হোসেন বলেন যে, ওই কুকুরটি যদি এলাকায় আবার দেখা যায় এবং আমি যদি এই বিষয় নিয়ে কাউকে জানাই তবে তিনি আমার নামে মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটাবেন। পরে আমার ভাই আমাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আফজাল খাঁ'র ভাই মো. সাহেব আলী খান বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজবাড়ী সদর থানার এসআই আসাদ আমার ভাই আফজালকে খুঁজতে আমাদের বাড়িতে যান। তবে সেসময় আফজাল বাড়িতে ছিল না। শনিবার সকালে আমি আমার ভাইকে সাথে নিয়ে থানায় এসআই আসাদের কাছে গিয়ে আমার ভাইকে খোঁজার বিষয়ে জানতে চাই। তখন এসআই আসাদ বলেন ম্যাজিস্ট্রেট সুমন স্যার তাকে পাঠিয়েছিলেন।

এসময় এসআই আসাদ ম্যাজিস্ট্রেট সুমন স্যারকে ফোন করলে তিনি বিকেলে আমাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় তার খাস কামড়ায় যেতে বলেন। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে আমরা সেখানে যাওয়ার পর তিনি আফজালকে তার কক্ষে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে মারপিট করেন। আমি তখন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

প্রায় দুই ঘন্টা পর আমার ভাই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেঁটে বাইরে বের হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। এসময় আমি আমার ভাইকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেই। তখন থানা থেকে আমাদের ফোন করা হলে আমরা থানায় গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করি। পরে আমার ভাইকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমি মোটরসাইকেল নিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ি যাই। মোটরসাইকেলে আমার স্ত্রীও ছিল। হঠাৎ একটি কুকুর আমাদের তাড়া করে। এতে আমরা অনেক ভয় পেয়ে দুর্ঘটনার কবল থেকে রক্ষা পাই। এসময় স্থানীয় লোকজন জানায় কুকুরটি আফজাল খা'র এবং কুকুরটি প্রায়ই পথচারীদের তাড়া করে। যে কারণে আমি পুলিশ দিয়ে আফজাল খা'কে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য খবর পাঠাই। শনিবার বিকেলে তিনি আমার এখানে আসেন।

এসময় আমি ওই কুকুরের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি স্বীকার করেন যে কুকুরটি তার। আমি তাকে ওভাবে রাস্তায় কুকুর ছেড়ে দিতে নিষেধ করি। যে কুকুরের মালিক আছে সেই কুকুর কাউকে কামড়ালে নিয়মিত মামলা হতে পারে। এ বিষয়টি আমি তাকে বলে আইনগতভাবে একটু ভয়ও দেখাই। যাতে এ বিষয়ে সে একটু সিদ্ধান্ত নেয়। কেন সে আমার এখান থেকে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে তা আমার বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারবোনা।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শরীফ আল রাজীব বলেন, এ ধরণের একটি ঘটনা আমি শুনেছি। তবে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে কি না তা বলতে পারছিনা। বিষয়টি আমি একটু খোঁজ নিয়ে দেখছি।

#বিবিধ