মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে | এমপিও নিউজ

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলা চলমান থাকার পরেও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে ঝিকরগাছাসহ অতিরিক্ত যশোর সদর, চৌগাছা এবং শার্শা উপজেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

#এমপিও

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞার ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে। তিনি আগামী ৮ মার্চ অবসরে যাবেন। তার শেষ কর্ম দিবস হচ্ছে ৬ মার্চ। শেষ সময়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলা চলমান থাকার পরেও যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে ঝিকরগাছাসহ অতিরিক্ত যশোর সদর, চৌগাছা এবং শার্শা উপজেলার দায়িত্ব বাগান। একাই ৪ উপজেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেই ঝিকরগাছায় তপন কুমার মন্ডল, শার্শায় বাচ্চু, সদরে মুজিবর ও চৌগাছায় বাশারকে ক্যাশিয়ার হিসেবে নিযুক্ত করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠি অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রতি জোড় মাসের ১২ তারিখ জেলা শিক্ষা অফিসে তথ্য প্রেরণ করতে হয়। কোনো শিক্ষকের তথ্য ওইদিনের মধ্যে পাঠাতে না পারলে পরবর্তী জোড় মাসের ১২ তারিখ পাঠাতে হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকায় সরকারী নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে ১৬ তারিখ পর্যন্ত তথ্য পাঠান। যে সব শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকার করেন তাদের তথ্য প্রেরণ করেন না তিনি।

চার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিগত দিনের ভূয়া নিয়োগ, এরিয়াসহ শিক্ষক/কর্মচারীর বেতন ভাতাদির পুরাতন সব তথ্য অনলাইনে আবেদন করেন। ঝিকরগাছায় তিনি ও তার ক্যাশিয়ার তপন কুমার মন্ডল শিক্ষকদের জিম্মি করে কোনো ফাইল ছাড়তে হলে শিক্ষকদেরকে বলে আমার মজুরী দেন, মিষ্টি খাওয়ার টাকা দেন।

সম্প্রতি ১৩ তারিখ শার্শা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারী বাচ্চু বিশ্বাসের মাধ্যমে ও্ইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে অফিসে ডেকে দেন দরবার করেন। উপজেলা অফিসে বসেই বাইরে প্রকাশ না করার শর্তে চুক্তির মাধ্যমে বাচ্চুর নিকট টাকার লেনদেন সম্পন্ন করা হলে তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেন অনলাইনের মাধ্যমে। শার্শার সেতাই মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিও ভূক্ত হয় (মাধ্যমিক পর্যায়ে) ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ বাণিজ্য তুঙ্গে

ঐ প্রতিষ্ঠানের ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগকৃত মোঃ শহিদুল ইসলাম ও মোঃ জাহাঙ্গীর কবিরের নিয়োগে সমস্যা থাকায় এ পর্যন্ত এমপিও ভূক্ত হতে পারেনি। এই শিক্ষকদের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে ৬ তারিখ জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করে। শাখা অনুমোদন না থাকায় এবং ভূয়া অনুমোদন কপি সংযুক্ত করায় ১৫ তারিখ বাতিল হয়ে যায়। পরে বাচ্চু বিশ্বাসের মাধ্যমে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টাকায় রফাদফায় ১৬ তারিখ জেলা শিক্ষা অফিসে আবার তথ্য প্রেরণ করেছেন।

অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে টেংরা মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় সহকারি গ্রন্থাগারিক নিয়োগ হয়। সনদপত্র ভূয়া থাকায় সাবেক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঐ তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেননি। বর্তমানে ঐ শিক্ষক বেতনের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে তথ্য জেলা অফিসে প্রেরণের জন্য সভাপতির স্বাক্ষর আনতে গেলে এতোদিন পরে কেনো স্বাক্ষর লাগবে জানতে চান এবং সব জেনে শুনে সভাপতি সাফ জানিয়ে দেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে প্রত্যয়ন পত্র দিলে আমি স্বাক্ষর করে দিবো। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় লাখের অধিক টাকার বিনিময়ে প্রত্যয়ন পত্র ইতিমধ্যে প্রদান করেছেন। যার অডিও ক্লিপ গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে। ঘিবা দাখিল মাদ্রাসা নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও ভূক্ত হওয়ায় পূর্বে সহকারি লাইব্রেরিয়ানে ভূয়া নিয়োগ দেখিয়ে বেতন ভাতাদির জন্য তিনি অংঙ্গীকার করেছেন।

নিয়োগের বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চৌধুরী মোঃ হাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন নিয়োগ আমার কর্মরত সময়ে হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল শীটে স্বাক্ষর আছে বললে তিনি জানান তাহলে ওই স্বাক্ষর জাল বা স্ক্যান করা।

এছাড়া বলরামপুর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনজনকে ফল সমন্বয় করে জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্তির সব আয়োজন করেছেন। ফাইল এখন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, মাদ্রাসার এফটিপি পাসওয়ার্ড এখনও পাইনি। প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছি তবে অর্থের বিষয়টি সঠিক না। নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ টাকা নিলে এটা আমার অক্ষমতা। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। চার উপজেলার দায়িত্বে কেনো প্রসঙ্গে বলেন পাশের উপজেলা থেকে নেওয়া যাবে এটা বিধানে আছে এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

#এমপিও