৫৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা ফেরত দিয়েছেন সেই ছাত্রদল নেতা | কলেজ নিউজ

৫৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা ফেরত দিয়েছেন সেই ছাত্রদল নেতা

টাকা ফেরত পাওয়ার পর কলেজের বিজয় ২৪ ছাত্রাবাসের ১৪ শিক্ষার্থীসহ ভুক্তভোগী ৫৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। তবে বাকি শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

#ফরম পূরণ #ছাত্রদল #কলেজ

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থীকে কমিশনে ফরম পূরণ করে দেয়ার নামে নেয়া টাকার মধ্যে ৫৪ জনের টাকা ফেরত দিয়েছেন কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আকাশ। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রদলের নেতাদের উপস্থিতিতে আকাশের বড় ভাই আরিফুজ্জামান আপেল কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাছে এই টাকা হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। টাকা ফেরত পাওয়ার পর কলেজের বিজয় ২৪ ছাত্রাবাসের ১৪ শিক্ষার্থীসহ ভুক্তভোগী ৫৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। তবে বাকি শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন: ফরম পূরণের টাকা আত্মসাতের দায়ে ছাত্রদল নেতাকে আটকে রাখলেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রদল নেতা আকাশকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর তাঁর বড় ভাই আপেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের আশ্বাস দেন। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষ, হল সুপার ও একাধিক শিক্ষক এবং পুলিশ উপস্থিত ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে জজকোর্টসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের কাছে জেলা ছাত্রদলের একাধিক নেতার উপস্থিতিতে আকাশের ভাই আপেল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাছে ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা হস্তান্তর করেন। ওই টাকা দিয়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের ব্যবস্থা হলে ছাত্রাবাসে উপস্থিত ভুক্তভোগী বাকি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা অবরুদ্ধ ছাত্রদল নেতা আকাশকে ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে খবর পেয়ে জেলা ছাত্রদলের নেতারা হল চত্বরে উপস্থিত হয়ে আরও ১৭ শিক্ষার্থীর টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে আকাশকে ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

বিজয় ২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা আকাশকে টাকা উত্তোলনে সহায়তাকারী মাকসুদ বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা আকাশ কম টাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আমাদের জানান। আমি এবং জোবায়েরসহ কয়েক শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা নিয়ে আকাশকে দিই। কিন্তু তিনি টাকা নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করে দেননি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা টাকা ফেরতের দাবিতে আকাশকে হলের ভেতর অবরুদ্ধ করে রাখেন। তখন তাঁর বড় ভাই হলে পৌঁছে টাকা ফেরতের আশ্বাস দেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে কলেজের দুই শিক্ষক, পুলিশ ও ডিবি পুলিশ সদস্য এবং দুই শিক্ষার্থীসহ আমি নিজে গিয়ে ছাত্রদল নেতাদের উপস্থিতিতে আকাশের ভাইয়ের কাছে টাকা নিয়ে আসি। কিন্তু হলের বাকি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা আকাশকে ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। খবর পেয়ে আবারও জেলা ছাত্রদল নেতারা বিজয় ২৪ হল চত্বরে এসে বাকি ১৭ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা প্রদান করেন। এরপর আকাশকে নিয়ে তাঁরা চলে যান।’

এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের কাছে টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেননি অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আকাশ। তবে তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের সামনে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সে সময় আকাশের বড় ভাই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত দেওয়ারও আশ্বাস দেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘আকাশ টাকা নিয়েছিল এটা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। তাঁর অপকর্মের দায় ছাত্রদল কেন নেবে? ছাত্রদলের উচিত আকাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এতে করে শিক্ষার্থীরা জানবে যে ছাত্রদল অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয় না। এতে সংগঠনটির ভাবমূর্তি বাড়বে।’

জেলা ছাত্রদল সভাপতি আমিমুল ইহসান বলেন, ‘কয়েক শিক্ষার্থী মিলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছে ফরম পূরণের টাকা উত্তোলন করেছিল। তারাই আবার ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় ছাত্রদল নেবে না। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ যাতে কোনোভাবে বাদ না যায়, সেজন্য মানবিক দিক বিবেচনায় কয়েকজন নেতা বিষয়টি মনিটরিং করেছেন। একই সঙ্গে আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউল হক খান চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা আকাশ ও তাঁর ভাই ৫৪ শিক্ষার্থীর টাকা ফেরত দিয়েছেন। তাঁদের ফরম পূরণ করা হয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’

#ফরম পূরণ #ছাত্রদল #কলেজ