দেশের বড় সমস্যা একইসঙ্গে সৎ ও মেধাবী মানুষের অভাব | বিবিধ নিউজ

দেশের বড় সমস্যা একইসঙ্গে সৎ ও মেধাবী মানুষের অভাব

‘শিক্ষার্থীরা তাহলে কেমন শিক্ষক পায়? রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণি বা বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যাদের মধ্যে অহমবোধ বা ব্যক্তিত্ববান হওয়ার স্পিরিট নাই, যা তাদের চলনে-বলনে ও কথনে স্পষ্ট।'

#কামরুল হাসান মামুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা হলো দেশে উদাহরণীয় আদর্শবান, সৎ এবং একই সঙ্গে মেধাবী মানুষের তীব্র অভাব। ছেলেমেয়েরা ঘরে আদর্শবান সৎ (মেধাবী না হয় বাদই দিলাম) বাবা-মা পায় না, স্কুলে গিয়ে উদাহরণীয় আদর্শবান, সৎ ও মেধাবী শিক্ষক পায় না।’

শনিবার (২৬ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া একটি পোস্টে এসব কথা লিখেছেন তিনি।

শিক্ষকদের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাহলে কেমন শিক্ষক পায়? রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণি বা বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যাদের মধ্যে অহমবোধ বা ব্যক্তিত্ববান হওয়ার স্পিরিট নাই, যা তাদের চলনে-বলনে ও কথনে স্পষ্ট।

স্কুলের শিক্ষকদের এমন বেতন দেওয়া হয়, যাতে তাদের মেরুদণ্ডই তৈরি না হয়। তারা যেন মোটামোটি একটা জীবিকা অর্জনের জন্য নানা ধান্দা যেমন প্রাইভেট পড়ানো, কোচিং করানো, রাজনীতি ও তোষামোদি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে।

শিক্ষার্থীরা যদি দেখে তাদের শিক্ষক তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেয় না, স্নেহ করে না, এক্সট্রা ফেভার দেয় না; তখন শিক্ষার্থীরাও সেই অল্প বয়সেই নিজেদের অজান্তে এসব শিখে ফেলে।’

শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও দেখে তাদের শিক্ষকরা ক্লাসে ফাঁকি দেয়, টক-শোতে গিয়ে দলবাজি করতে গিয়ে মিথ্যা কথা বলে, রাজনৈতিক নেতার পেছনে ঘুরঘুর করে, অন্যত্র পার্ট-টাইম পড়ানোতে ব্যস্ত থাকে।

শিক্ষার্থীদের জীবনের ২৪-২৫ বছর পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে কেবলই ধান্দাবাজ, চাপাবাজ, ফাঁকিবাজ শিক্ষক দেখে; তাহলে কার কাছ থেকে কী শিখবে?’

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার মতো শিক্ষক কি বাংলাদেশে যথেষ্ট আছে? অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্লাস কলেজ খুলে ফেলেছি হাজার হাজার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন সব মানুষদের নিয়োগ দিয়েছি, যাদের অনেকের স্কুলের শিক্ষক হওয়ারও যোগ্য না।

যে যা কিছু হওয়ার যোগ্য না, তাকে সেটা বানিয়ে ফেললে যেই ক্ষতি হয়, তা মাপা যায় না, বলে বোঝানো যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের উচিত উদাহরণীয় মেধাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো। দেশে না থাকলে বিদেশ থেকে দেশি কিংবা বিদেশি আনতে হবে।

এই দেশে এমনিতেই লেখক, শিক্ষক ও চিন্তক মানুষের দারুণ খরা চলছে। এই খরা না কাটালে দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। দেখেন না কারা এখন আমাদের মডেল, কারা ইনফ্লুয়েন্সিয়ার?

যখন সত্যিকারের উদাহরণীয় সৎ আদর্শবান মেধাবী যথেষ্ট সংখ্যক থাকবে, তখন ওসব ধান্দাবাজ চাপাবাজ ইনফ্লুয়েন্সিয়াররা আর পাত্তা পাবে না।

দেশে যখন উন্নত মানের সৎ আদর্শবান উদাহরণীয় মেধাবী মানুষ থাকবে, তখন খারাপ মানুষেরা নিজেদের গুটিয়ে নেবে। নিজেদেরকে তখন তারা এক্সপোজ করতে লজ্জা পাবে।’

#কামরুল হাসান মামুন