মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নেই গবেষণা, অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য | বিবিধ নিউজ

মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে নেই গবেষণা, অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য

ইউনেসকো ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশ সরকার একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি প্রায় ১৯৪ কোটি ৯ লাখ টাকায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়।

#মাতৃভাষা #মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট

'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এক যুগেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে মূল কাজ বিশ্বের সব ভাষার সংরক্ষণ ও ভাষা নিয়ে গবেষণা করা। দেশের বিপন্ন ভাষাগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে তেমন কোনো মৌলিক গবেষণা হয়নি।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ৯৮টি পদের মধ্যে ৭১টি পদই খালি। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শাসনামলে প্রতিষ্ঠানটিকে গতিশীল করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

ইউনেসকো ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশ সরকার একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি প্রায় ১৯৪ কোটি ৯ লাখ টাকায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ছয়তলা একটি ভবন রয়েছে। ইনস্টিটিউটের একাধিক বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিভিন্ন দিবস পালন ও সরকারের গতানুগতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতেই প্রতিষ্ঠানটি বছরের বেশির ভাগ সময় পার করেছে।

কার্যক্রম শুরুর ১৪ বছরেও তেমন গবেষণা নেই প্রতিষ্ঠানটির। বাংলাদেশে কতগুলো ভাষা রয়েছে, সেই ভাষাভাষীর মানুষের প্রকৃত সংখ্যা কত, এই বিষয়গুলো নিয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। এই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ১০ খণ্ডের একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ হওয়ার কথা। অথচ দশ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ হয়েছে মাত্র ১টি খণ্ড।

প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি ভাষা জাদুঘর থাকলেও প্রচারণার অভাবে তেমন কোনো দর্শনার্থী আসে না।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চিঠি দেওয়ার পরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছিল। তারা দেখে ঘুরে গেছে। বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কিন্তু আমরা দেখছি যে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকেও এসেছে। এটার কার্যক্রমটা আমাদের চলছে। তবে আরও মনে হয় গতি বাড়ানো দরকার।’

ইনস্টিটিউটের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৯৮টি অনুমোদিত পদ আছে। অথচ এত বছরেও পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৯৮টি পোস্ট আমাদের, সেখানে ৭১টিই খালি আছে। আমি আসার পরে মন্ত্রণালয়কে লিখেছি। এই পদগুলো পূরণ হলে এই প্রতিষ্ঠান হয়ত ভালো একটি অবস্থানে যাবে।’

ভাষা গবেষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মনিরা বেগম বলেন, ‘একটি মাতৃভাষা পিডিয়া বের করছিল, এটা বেশ ভালো মানের গবেষণা। চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, হয়ত আরও ভালো কাজ হবে। আমরা হয়ত এ বিষয়গুলো নিয়ে আরও ভালো ভূমিকা তাদের দেখতে পাব।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বলছে, নতুন করে অনুবাদ ও বিপন্ন কিছু ভাষা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

#মাতৃভাষা #মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট