বেসরকারি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন দুই ছাত্রীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যাত্রাবাড়ীর জুরাইন এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের আটক করে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন।
নির্ভরযোগ্য ওই সূত্র জানিয়েছে, আটকদের নাম- ফাতেমা তাহসিন ঐশী এবং ফারিহা হক টিনা। তারা দু’জনে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের শিক্ষার্থী। পারভেজ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তারা আত্মগোপনে ছিলেন। পূর্ব জুরাইনের ওই বাসায় আটকের দুই দিন আগে তারা বাসা ভাড়া নেন। তাদের আটকের বিষয়টি দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তা স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ডিবি কর্তৃক দুই ছাত্রী আটকের ঘটনা সঠিক নয়।
জুরাইনে ডিবি পরিচয়ে যে বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে সেখানকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই দুই ছাত্রীকে আটক করলেও স্থানীয়দের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছেন, এই দুই ছাত্রী নাটোর থেকে অপহরণের শিকার হয়েছে। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন টিম তাদের আটক করেছে তা কোনো সংস্থা গতকাল পর্যন্ত স্বীকার করেনি।
এর আগে, দুই ছাত্রীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ক্যাপ্টেন মোবাশ্বের আলী খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে, গত বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত দুই নারীর অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে। আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ওই দুই নারী কোথায়? তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দুই নারীকে তারা খুঁজছে।
পারভেজ হত্যা মামলার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২১ এপ্রিল রাতে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯) নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি হৃদয় মিয়াজিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার তিন নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৪)। তার মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে ১৯ এপ্রিল বেলা ৩টায় বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের একটি সিঙ্গাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন।
তাদের পেছনেই দাঁড়ানো ছিল ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দু'জন ছাত্রী। পারভেজ তাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে কি না, সেটি জানতে আসেন মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০) ও মাহাথির হাসান (২০) নামের তিনজন। পরে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। যা দেখা যায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও। পরে এ ঘটনা প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্যদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতেই গেটের সামনে পারভেজের ওপর হামলা হয়। তাতে ছুরিকাঘাতে মারা যান পারভেজ। সূত্র: নয়া দিগন্ত