ইতিকাফ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অনন্য ইবাদত | মতামত নিউজ

ইতিকাফ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অনন্য ইবাদত

পরিভাষায় ইতিকাফ হলো, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে গুটিয়ে, এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।

রমজানের অন্যতম আমল হচ্ছে শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইতিকাফের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য ও ফজিলত। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহিমান্বিত ইবাদত। দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে পাশে ঠেলে আল্লাহর ঘরে, আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া হয় ইতিকাফে। ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, অভিমুখী হওয়া, নিবেদিত হওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায় ইতিকাফ হলো, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততাকে গুটিয়ে, এমন মসজিদে অবস্থান করা, যেখানে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।

ইতিকাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি অনেক প্রাচীন বিধান। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে ইতিকাফের কথা ও তার বিধান নাজিল করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন : আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে নির্দেশ দিলাম যে, আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও ইতিকাফকারীদের জন্য পবিত্র কর (সুরা বাকারা: ১২৫) এই আয়াত থেকে বুঝা যায় ইতিকাফের বিধান ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর যুগেও ছিল। তাছাড়া হজরত উমর (রা.) জাহিলিয়াতের যুগে একবার মসজিদে হারামে একদিন ইতিকাফের মান্নত করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর রাসুল (সা.)-কে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা পূরণ করতে আদেশ দেন। অপর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন : তোমরা স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফ করো (সুরা বাকারা: ১৮৭) এতে ইতিকাফের একটি বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

ইতিকাফের প্রকার ও হুকুম

ইতিকাফ তিন প্রকার :

১. সুন্নত ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকে ২০ তারিখ সূর্যাস্তের আগ থেকে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত ইতিকাফ করা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর এ দিনগুলোতে ইতিকাফ করতেন, তাই একে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়।

২. নফল ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ দশ দিনের কম ইতিকাফ করা। অথবা বছরের অন্য যেকোনো সময় যতক্ষণ ইচ্ছা ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা।

৩. ওয়াজিব ইতিকাফ : মান্নতকৃত ইতিকাফ এবং সুন্নত ইতিকাফ ফাসেদ হয়ে গেলে তার কাজা আদায় করা।

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নাতে মোয়াক্কাদায়ে কেফায়া। মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। কেউ আদায় না করলে সকলে গুনাহগার হবে।

ইতিকাফের ফজিলত

ইতিকাফ অন্যতম সুন্নাত আমল। রাসুল (সা.) প্রতিবছর ইতিকাফ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। পরবর্তীতে সম্মানিত বিবিগণও করেছেন। রাসুল (সা.) এক বছর যুদ্ধের সফরের কারণে ইতিকাফ করতে পারেননি, তাই পরবর্তী রমজানে বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকি তার জন্য লেখা হয়।

অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে দশ দিন ইতিকাফ করবে তার জন্য দুইটি হজ্জ ও দুইটি ওমরার সওয়াব লেখা হবে। (বায়হাকি শরিফ: ৩৬৮০)। ইতিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। কদরের রাত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদরের তালাশ করো। ( বুখারি শরিফ: ২০২০)।

ইতিকাফকারী শবে কদরের ফজিলত লাভ করে

ইতিকাফকারীর মসজিদে অবস্থান যেহেতু ইবাদত হিসেবে গণ্য তাই তার ক্ষেত্রে কদর লাভ করা নিশ্চিত বলা যায়। আর লাইলাতুল কদরের ফজিলতের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সুরা কদর: ০৩)। এছাড়াও ইতিকাফকারী সর্বদা আল্লাহর ঘরে থাকেন। নিরালায়, একাকী, কায়মনোবাক্য ও খুশু-খুজুর সাথে ইবাদত করতে পারেন। গুনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ ও ইবাদত মুখর অবস্থায় সময় কাটাতে পারেন। গিবত ও গুনাহমুক্ত থাকেন। দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততা ও ঝামেলা থেকে বিরত থাকেন। ইতিকাফের মাধ্যমেই রোজার প্রকৃত হক আদায় করা ও রমজানের রহমত ও বরকত অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন।