পরবর্তীতে রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। তবে এই পদত্যাগ ঘোষণার পরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামেনি।
কারণ শিক্ষার্থীদের অন্দোলনের মুখে উপাচার্য তার দলবল নিয়ে পদত্যাগ করলেও পদত্যাগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কিছু শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তাই পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী অগ্রহণযোগ্য ও অসম্মানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই ‘কিছু শিক্ষার্থী’ শব্দবন্ধের প্রতি আপত্তি জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের স্পষ্ট দাবি, পদত্যাগপত্রে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নয়’ বরং ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে’ এই বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
আর পড়ুন: নিয়মই যেখানে নিয়ম
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাদের ভাষ্য, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। এই কারণে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্রে সঠিক তথ্যটিই উল্লেখ করেছেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি মানতে নারাজ।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, রাত ৯টার পর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১২টা) উপাচার্যসহ অন্তত ২৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
মূলত তিন দফা দাবিতে ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। শনিবার সকাল ৯টা থেকে তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
পরবর্তীতে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে রাত ৯টার দিকে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাদের আন্দোলন শুরু হয়। পরে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ছাড়াও ইউআইউ রিফর্ম ১.০ ও জুলাই বিপ্লবে বাধা দেয়া, এক ছাত্রীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার কাছে কাউন্সিলর থেকে ডেড সার্টিফিকেট চাওয়া, আইসিইউ ফেরত শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো, বিশ্ববিদ্যালয়ে একক সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল হুদার পদত্যাগ।
২. মিড টার্ম পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
৩. ইউআইউ রিফর্ম ১.০ এ যেসব দাবি মানা হয়েছিল, সব দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষভাবে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার ফি মিড টার্মে কোর্সপ্রতি ২ হাজার টাকা ও ফাইনাল পরীক্ষায় ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের মতামতকে উপেক্ষা করেছে।শিক্ষার্থীরা চান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে পুনরায় আলোচনায় বসবে। তাদের উত্থাপিত সমস্যাগুলোর একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করে। তারা মনে করেন, কর্তৃপক্ষের একতরফা সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না।
সর্বেোপরি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই ধরনের হয়রানি বন্ধের সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা চান।
উপাচার্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি বড় ধরনের বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তাদের মূল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। ক্যাম্পাসে উত্তেজনা এখনো বিরাজ করছে ।
অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেয় কি-না।