'সিন্ধুর' পানি ছাড়লো কেন ভারত ? | বিবিধ নিউজ

'সিন্ধুর' পানি ছাড়লো কেন ভারত ?

উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ‘জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’। সেই সময়ের হুমকি বাস্তবায়ন হলো কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ঠিক পর পরেই। ভারতের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয় সিন্ধু চুক্তি বাতিলের। পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করাকে ‘পানি যুদ্ধ’ অখ্যা দিয়ে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারেও হুমকি দিয়েছে। কিন্তু পানি বন্ধ করার পর ফের ভারত পানি ছিড়ে দিলো।এবার ডুবলো পাকিস্তান। অকাল বন্যায় বানভাসী হলো সাধারণ মানুষ। কিন্তু কেন কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের রক্তের পর বন্ধ করার পর ফের সিন্ধুর জল ছাড়লো ভারত।

#ভারত #পাকিস্তান

উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন ‘জল আর রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’। সেই সময়ের হুমকি বাস্তবায়ন হলো কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ঠিক পর পরেই। ভারতের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয় সিন্ধু চুক্তি বাতিলের। পাকিস্তান সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করাকে ‘পানি যুদ্ধ’ অখ্যা দিয়ে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারেও হুমকি দিয়েছে।

কিন্তু পানি বন্ধ করার পর ফের ভারত সিন্ধু চুক্তিতে থাকা তাদের অংশের তিনটি নদীর একটির পানি ছিড়ে দিলো। এবার ডুবলো পাকিস্তান। অকাল বন্যায় বানভাসী হলো সাধারণ মানুষ। পাকিস্তান ঘোষণা করলো জরুরী অবস্থা। কিন্তু কেন কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জনের রক্তের স্রোতের পর হুট করে সিন্ধু চুক্তি ’বাতিল’ ঘোষণার পর ফের সিন্ধুর জল ছাড়লো ভারত?

কারণ ঢাকা, দিল্লি ইসলামাবাদের সংবাদমাধ্যমগুলো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার সিন্ধু চুক্তিকেস্থগিতবাসাসপেন্ডহিসেবে উল্লেখ করলেও, বাস্তবে চুক্তিটি এখনো বহাল রয়েছে।

কারণ, এই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে কোনো পক্ষেরই এককভাবে বেরিয়ে আসার অথবা স্থগিত করার সুযোগ নেই। ভারত এই বিষয়ে পাকিস্তানকে যে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে, সেখানেসাসপেনশননা লিখেইন অ্যাবিয়েন্সশব্দটি ব্যবহার করেছে। যার অর্থ সাময়িক অকার্যকারিতা। স্থগিতাদেশ নয়।

কৌশলগতভাবে ভারতভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য অব ট্রিটিজথেকে এই শব্দটি নিয়েছেন ভারতীয় বোদ্ধারা। কারণ উভয় দেশই এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। বিশেষ পরিস্থিতিতে এর আওতায় অন্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ঠিক পর পরেই ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিল, তার মধ্যে সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি ছিল সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত।

এর আগে দুই দেশ বহুবার একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার, ভিসা বন্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নিলেও, এই চুক্তিটির কার্যকারিতা সবসময় অক্ষুণ্ণ ছিল। এমনকি ১৯৬৫ ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়ও এই চুক্তিতে হাত পরেনি কোন পক্ষের।

তবে, ২০১৬ সালে উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন। তার কথা ছিলো পানি রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না

এত কিছুর পরেও, গত ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত কেউই ধারণা করতে পারেনি যে চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

এর প্রধান কারণ হলো, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এশিয়ার দুটি সেরা চুক্তির মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্য সেরা চুক্তিটি হলো ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেকং চুক্তি।

বাংলাদেশ-ভারত কিংবা ভারত-নেপালের মধ্যেকার জলবন্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় প্রায়শই সিন্ধু মেকং চুক্তির প্রসঙ্গ উঠে আসে।

ভারত পাকিস্তানের মতো দুটি চিরশত্রু রাষ্ট্রের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি দীর্ঘ বছর ধরে টিকে থাকার কারণ হলো এর কিছু অনন্য অন্তর্নিহিত শক্তিশালী দিক।

প্রথমত, এই চুক্তিসিন্ধু চুক্তিনামে পরিচিত হলেও, এর আওতায় সিন্ধুসহ মোট ছয়টি নদী অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে সিন্ধু, বিতস্তা চন্দ্রভাগাএই তিনটি পশ্চিমা নদীর সম্পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের।

শতদ্রু, বিপাশা ইরাবতীএই তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর সম্পূর্ণ অধিকার ভারতের। উভয় দেশ তাদের ভাগের জল নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। এখানে কোনো জলবন্টন বা পরিমাপের বাধ্যবাধকতা নেই।

দ্বিতীয়ত, সিন্ধু চুক্তির কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি একটি স্থায়ী চুক্তি। যেখানে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার জলবন্টন চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর।

তৃতীয়ত, এই চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সালিশি ব্যবস্থার উল্লেখ আছে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, মতবিরোধ দেখা দিলে বিশ্বব্যাংক মধ্যস্থতা সালিশের ভূমিকা পালন করবে।

সিন্ধু চুক্তির শর্তানুযায়ী, পাকিস্তানের ভাগের তিনটি নদীসিন্ধু, বিতস্তা চন্দ্রভাগার উজানে ভারত কোনো বাঁধ নির্মাণ বা জল আটকানোর অধিকার রাখে না।

তবে, ভারত এখন এই ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে জল আটকানোর কথা বলছে। এছাড়াও, ছয়টি নদীর বন্যা বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত যে তথ্য পাকিস্তান কে দেওয়ার কথা, তাও তারা বন্ধ করে দিতে পারে।

কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, ভারতের ভাগের তিনটি নদীরশতদ্রু, বিপাশা ইরাবতীবাঁধগুলো আকস্মিকভাবে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানেবন্যা অস্ত্রহিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। যা রবিবার শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমে ইতেমধ্যে খবর প্রকাশ হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যদি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে গঙ্গার জলবন্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারত তা নবায়ন না করে বা ঝুলিয়ে দেয়?

অথবা যদি বন্যার আগাম তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়? এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#ভারত #পাকিস্তান