প্রাথমিকে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল কেনো | মতামত নিউজ

প্রাথমিকে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল কেনো

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। নার্সদের নিয়োগ পদে যোগ্যতা এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং), বেতন গ্রেড ১০ম। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়োগ যোগ্যতা এসএসসি (৪ বছর কৃষি ডিপ্লোমা), বেতন গ্রেড ১০ম। ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ যোগ্যতা, আগে ছিলো এইচএসসি বর্তমানে স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম ও ৯ম।

প্রাথমিকের কতিপয় শিক্ষক নেতাদের দীর্ঘসময় ধরে দশম গ্রেডের তসবি জপতে জপতে হঠাৎ তাদের মাঝে এলো স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের ভাবনা। অনেকটা সারারাত রামায়ণ পড়ে সবকিছু ভুলে বললো সীতা কে? তাদের এই ভাবনা গোটা শিক্ষক সমাজকে বিস্মিত করে দিয়েছে। শিক্ষক সমাজের প্রশ্ন, সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন স্কেলের বৈষম্যের ফেনা তুলে আজকে সবকিছু ভুলে নতুনভাবে স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথা তুলছেন কেনো? এ যেনো নতুন সাজে নতুনরূপে বৈষম্য তথা মর্যাদার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অশুভ তৎপরতা। এ জিকির শিক্ষক স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। এ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের একই যোগ্যতা ও একই কাজের বৈষম্য তুলে ধরছি।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। নার্সদের নিয়োগ পদে যোগ্যতা এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং), বেতন গ্রেড ১০ম। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়োগ যোগ্যতা এসএসসি (৪ বছর কৃষি ডিপ্লোমা), বেতন গ্রেড ১০ম। ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ যোগ্যতা, আগে ছিলো এইচএসসি বর্তমানে স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম ও ৯ম।

এ ছাড়া একই ক্যারিকুলাম, সিলেবাস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক (দ্বিতীয় শ্রেণি), দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন, বেতন গ্রেড ১০ম। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক (দ্বিতীয় শ্রেণি) সমমান হলেও তাদের বেতন গ্রেড ১৩তম।

বর্তমান সরকার যেখানে বৈষম্য নিরসনের প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে, সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত উপদেষ্টার নেতৃত্বে বিগত সরকারের আমলের কার্যক্রম বাস্তবায়নের শিক্ষক সমাজসহ সব মহলে মতামত অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রাথমিকের শিক্ষক সমাজসহ সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে।

যেখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের বৈষম্য ও মর্যাদার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সব রাজনৈতিক নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়করা। সেখানে সাবেক আওয়ামী সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড বৈষম্য নিরসনের গলার কাঁটা হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষক বাস্তবায়নে ব্যস্ত বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। ইতিপূর্বে তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি অনেকটা ক্রীতদাসের ন্যায় উক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষকতায় না পোষালে শিক্ষকদের অন্যত্র চলে যেতে’। তার বক্তব্যের নিন্দার ঝড় উঠলেও তিনি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। প্রায় ৪০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘসময় শূন্য রেখে, তিনি বৈষম্য নিরসন তথা থার্ড ক্লাস থেকে বের হয়ে সেকেন্ড ক্লাস যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে চলেছেন।

সহকারী প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক পদ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ যেখানে দশম গ্রেড তথা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তারা বর্তমান সরকারের কাছে বুকভরা আশা নিয়ে প্রতীক্ষায় রয়েছেন। সেখানে কতিপয় শিক্ষক নেতা যারা দীর্ঘসময় ধরে দশম গ্রেড নিয়ে আন্দোলনরত ছিলেন। তাদের কাউন্সিল অধিবেশনে বা সভা-সমাবেশে জাতীয় রাজনৈতিক নেতাদেকে নিয়ে আন্দোলনের তথা দশম গ্রেডের যৌক্তিকতা তথা মর্যাদা নিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সভাকক্ষে সাবেক সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে সুর মিলিয়েছেন। ইদানিং ফেসবুকে দেখা যায় কিছু দুষ্টু লোক কাগজের মধ্যে বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে সাধারণ মানুষকে দিশেহারা করে মূল্যবান মোবাইল টাকা পয়সা নিয়ে যায়। তেমনি একসময় যেসব নেতারা দশম গ্রেডের কথা বলতেন, বর্তমানে তাদের কতিপয়ের মুখ দিয়ে বৈষম্য তথা মর্যাদাবিরোধী বিবেকবর্জিত স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না। তারাও কি দুষ্টু চক্রের কবলে পড়েছেন? যেখানে বৈষম্য দূরীকরণসহ মর্যাদা উন্নীত আন্দোলনে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ, সেখানে কতিপয় শিক্ষক নেতাকে দিয়ে নানা অপচেষ্টা করে সাবেক সরকারের অশুভ কার্যক্রম বাস্তবায়ন কতোটুকু সম্ভব? প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আশা করি প্রাথমিক শিক্ষা তথা প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বার্থবিরোধী কোনো অপকর্ম থেকে মন্ত্রণালয় বিরত থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের মর্যাদা তথা বৈষম্য দূরীকরণে দশম গ্রেড শিগগির বাস্তবায়ন হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষাবিদ