সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার সিলেবাসকে সময়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার কাজ চলছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ৪৯তম বিসিএস থেকেই এই যুগোপযোগী সিলেবাস কার্যকর করা হবে।
বৃহস্পতিবার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম এসব কথা বলেন।
পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম আরো বলেন, "আমরা বিসিএসের সিলেবাস যুগোপযোগী করার কাজ করছি। এ নিয়ে গবেষণা চলছে। নতুন সিলেবাস এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে, যাতে আমাদের চাকরিপ্রার্থীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে পারে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। তাই, বিসিএসের সিলেবাসকে সেই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকীকরণ করা অপরিহার্য। নতুন সিলেবাস প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
পিএসসি একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে, যারা বিভিন্ন বিষয়াবলী পর্যালোচনা করে নতুন সিলেবাসের কাঠামো তৈরি করছেন। এই সিলেবাসে এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা একজন প্রার্থীকে কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং প্রায়োগিক দক্ষতা এবং বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা অর্জনেও সহায়ক হবে।
দীর্ঘদিন ধরে বিসিএসের সিলেবাস পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা এবং শিক্ষাবিদগণ। তাদের মতে, পুরনো সিলেবাস বর্তমান চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ফলে সরকারি কর্মকমিশনের এই ঘোষণা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
নতুন সিলেবাসে তথ্য প্রযুক্তি, পরিবেশ বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সমসাময়িক বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, প্রার্থীদের সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং যোগাযোগ দক্ষতা মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়া হতে পারে।
মোবাশ্বের মোনেম বলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে পিএসসি জট কমিয়ে আনবে। আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে জট খোলার অগ্রগতি দেখা যাবে। এ জন্য কোনো পরীক্ষা পেছাতে চাইছি না, অন্য দেশের সিলেবাস জোগাড় করেছি।
তিনি বলেন, আবেদন ফি ৭শ থেকে কমিয়ে ২শ করা হয়েছে। এটাও পিএসসির সংস্কার ভাবনা থেকে এসেছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন করার কোনো বিধি ছিলো না। এটার দায়িত্ব আমাদের একজন কর্মকর্তা নিয়েছেন। পিএসসির উদ্যোগে এই ভেরিফিকেশনের কাজ করা হচ্ছে। এটাও একটা ছাত্রবান্ধব উদ্যোগ। পিএসসি প্রথমবারের মতো স্টেক হোল্ডারের কাছে যাওয়ার কাজ করছে। আমরা তাদের কথা শুনছি।
“এখন একটা বিসিএস এর কার্যক্রম শেষ হতে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় লাগে। এ সময়ে অনেকের পছন্দ পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েস দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। ৪৭তম বিসিএস থেকেই ভাইভার আগে ক্যাডার চয়েস পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে।"
বিজিপ্রেসে আর বিসিএসের প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমরা আরও নিরাপদ প্রেসে প্রশ্ন ছাপাব।"
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্টের আগে প্রণয়ন করা সব প্রশ্ন এরইমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল না করে আরও ১০ হাজার পরীক্ষার্থীকে কেন উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হল- এমন প্রশ্নে পিএসসির সদস্য মো. সুজায়েত উল্যা বলেন, "৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত অভিযোগ সিআইডি তদন্ত করছে এবং তদন্ত শেষে প্রশ্ন ফাঁসের অবৈধ সুবিধাভোগী প্রার্থীরা অবশ্যই সনাক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিএসসি সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পিএসসি সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, ডক্টর আমিনুল ইসলাম, সুজয়েত উল্লাহ, মিস্টার নুরুল কাদির, ব্রিগেডিয়া আনোয়ারুল ইসলাম।