তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে ২০১৩-১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে অবরোধের সময় যেভাবে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তা শুধু দেশের ইতিহাসেই নয়, পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে কোথাও ঘটেনি।
তিনি বলেন, শুধু যারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে, তাদের বিচার হলেই হবে না, যারা এর হুকুমদাতা-অর্থদাতাদেরও বিচার হতে হবে। এ অপরাধের যদি বিচার না হয় তাহলে এ ধরনের অপরাধ আরও ঘটবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠন আয়োজিত ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসী ও হুকুমদাতাদের বিচারের দাবিতে প্রতীকী অনশন’ শীর্ষক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২০১৩-১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে অসহায় মানুষের ওপর, স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীর ওপর, বিশ্ব ইজতেমা থেকে ফেরত মানুষের ওপর, বাস যাত্রীদের ওপর, অবরোধের কারণে থেমে থাকা ট্রাকে ঘুমন্ত চালকের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে তাদের শরীর অঙ্গার করে দিয়েছে, মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, শুধু পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারীরাই অপরাধী নয়, এর নির্দেশ সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে লন্ডন থেকে এসেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, গয়েশ্বর রায় বাবু, মির্জা আব্বাসসহ বিএনপির নেতারাই এই হামলার নির্দেশদাতা। তাদের নির্দেশে, তাদের অর্থায়নেই এই পেট্রোল বোমা হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। আজ সেই পেট্রোলবোমা হামলার শিকার যারা, তারা বিচারের দাবি নিয়ে এসেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু তার দলের নেতৃত্বে যে অপরাধ হয়েছে, তার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। সব অপরাধীরই বিচার হতে হবে।
তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো এ দেশের নাগরিক ও মালিক। তারা রাজনীতি করে না, রাজনীতি বোঝে না এবং তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যায়নি, প্রাত্যহিক কাজে জীবিকার তাগিদে বেরিয়েছিল। এই ধরনের ন্যক্কারজনক মানবতাবিরোধী ঘটনা বিশ্বের কোথাও ঘটেনি।
পেট্রোলবোমা হামলার শিকার ও তাদের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। তাই আমি মনে করি এই মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হওয়া প্রয়োজন এবং অগ্নিসন্ত্রাসের হুকুমদাতা, অর্থদাতাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। এই অপরাধের উপযুক্ত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করছি।
এ সময় বিদেশি সংস্থা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, তাদের উচিত এই অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়া মানুষগুলোর সঙ্গে সংহতি জানানো। তাহলে এই ধরনের অপরাধ চিরতরে বন্ধ হওয়ার পথ সুগম হবে।
পেট্রোলবোমা হামলায় আহত সংসদ সদস্য এড. খোদেজা নাসরিনের সভাপতিত্বে ও অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ সংগঠনের আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় এবং মো. রাশেদুল ইসলামের সমন্বয়ে পেট্রোলবোমায় অগ্নিদগ্ধ গীতা রাণী সেন, নিহত নাহিদের মাতা রুনি বেগম, নিহত ইউসুফের সন্তান জাহেদুল ইসলাম, নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারভীন, নিহত পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থের বাবা বিমল চন্দ্র সরকারসহ পেট্রোলবোমা হামলার শিকার প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ কর্মসূচিতে অপরাধীদের বিচার দাবি করে মর্মস্পর্শী বক্তব্য দেন।
কর্মসূচিতে আগত পেট্রোলবোমায় আহত ও নিহতদের স্বজনদের পানি পান করিয়ে তাদের অনশন ভঙ্গ করান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।