অটোপাস হবে না। করোনা কালের অভিজ্ঞতাও শতভাগ কাজে লাগবে না। কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থীর বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের পর এখন ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
আজ বুধবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে প্রাথমিকভাবে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই পাস করেন। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। পরের বছর কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকি বিষয়ের ফল একইভাবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই অভিজ্ঞতা ,শতভাগ কাজে লাগবে না।
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী সাড়ে ১৪ লাখের মতো। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার সরকার পতনের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি পরীক্ষা বাকি ছিল। ব্যবহারিক পরীক্ষাও হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভিন্ন পদ্ধতিতে ফলাফলের ধারণা দিয়ে বলেন, বাংলা–ইংরেজিসহ ইতিমধ্যে যে সাতটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর ফল হবে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ভিত্তিতে। আর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হচ্ছে না, সেগুলোর ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই সব শিক্ষার্থীর এসএসসি ও জেএসসির বা সমমানের সংশ্লিষ্ট বিষয় বা ভিন্ন উপায়ে ফল প্রকাশের জন্য নির্ধারিত বিষয়ের ফল বিবেচনা করা হবে। এখানেও যদি দেখা যায় কোনো বিষয়ে এসএসসিতে ফল খারাপ, সে ক্ষেত্রে জেএসসির ফল বিবেচনা করা হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। এরপর থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, পরীক্ষা না দিয়ে ফলাফল প্রকাশিত হলে তা মন্দ নজির হয়ে থাকবে, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে ভুগতে হবে।
যদিও পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের যুক্তি হলো, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাঁদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তাঁরা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। তাই তাঁরা ইতিমধ্যে হওয়া পরীক্ষা এবং স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান।
এ বিষয়ে আজ সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি মনে করেন, এ বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনার অবকাশ ছিল। তবে ইতিমধ্যে অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এখন মূল্যায়নের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এককভাবে কিছু করবেন না।