ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদাউসুর রহমানকে জোরপূর্বকভাবে ‘পদত্যাগ’ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার প্রভাবশালীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ঘটনায় অধ্যক্ষকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা এলাকায় বিক্ষোভ করে আন্দোলনে নেমেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই অধ্যক্ষকে ফেরানোর দাবিতে তারা বিক্ষোভ করে ‘এ পদত্যাগ অবৈধ’, ‘এ পদত্যাগ মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেয়।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে দেখা করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন।
নবীনগর ইচ্ছাময়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাউছার বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার সব শিক্ষককে নিয়ে মানববন্ধন করে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, উপজেলার কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সকাল ১১টার দিকে জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী লোক অধ্যক্ষ ফেরদাউসুর রহমানের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান, ‘আমরা কেন আসছি আপনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন?’ জবাবে অধ্যক্ষ ‘না’ বলার পরই তারা উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে তাকে এখনই পদত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।
এ সময় ফেরদাউসুর রহমান তাদের আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এ সময় কয়েকজনকে ফেসবুকে পুরো ঘটনাটির লাইভ করতে দেখা যায়। ফেরদাউসুর তখন বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও আগত ব্যক্তিরা তাকে সেই সময়টুকু দিতে চাননি। এক পর্যায়ে লোকজনের প্রচণ্ড চাপে পড়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদাউসুর রহমান একটি সাদা কাগজে ‘পদত্যাগ’ করে কলেজ থেকে চলে যান।
গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবার লেখা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ওই পদত্যাগপত্রে অবশ্য কোনো ধরনের কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ‘এ পদত্যাগ অবৈধ’, ‘এ পদত্যাগ মানি না, মানব না’ বলে বিদ্যালয়ের সামনে স্লোগান দিতে থাকে। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গতকাল সোমবারও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অধ্যক্ষের পুনর্বহালের দাবিতে এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের প্রিন্সিপাল স্যারকে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
আমরা স্যারকে দ্রুত স্বপদে বহাল দেখতে চাই। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে।’
ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বহিরাগত তখন আমাকে পদত্যাগের জন্য ধমকাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। এদের মারমুখী আচরণে আমি এক পর্যায়ে প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখে দিই। নয়তো আমাকে ওরা তখনই প্রাণে মেরে ফেলত। বিষয়টি পরে ইউএনও মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে পদত্যাগে বাধ্য করানো নেতৃত্ব দেওয়া জাহাঙ্গীর আলম খানের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে ওই দিন পদত্যাগে বাধ্য করানো লোকদের মধ্যে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একজন চরম দুর্নীতিবাজ। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তার এক যুগের আমলের রেজাল্ট দেখলেই সেটি বোঝা যাবে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তার পদত্যাগ চাইছিল।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাকে এই পদত্যাগ করানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সরকারি পরিপত্র জারির পর জোরপূর্বকভাবে এ ধরনের পদত্যাগ গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’