বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টার অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদতে অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বইটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ তার লেখা বইতে (শিরোনাম : হিস্টোরিসাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড স্টেট ভার্সেস পারসন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ভাষণ শেষে ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৪০), একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে অযথা বিতর্কের অবতারণা করেছেন (পৃ. ১৫ ও ১৬) ও ১৯৭১-এর গণহত্যার বিচার না হওয়ার পেছনে বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারকে দায়ী করেছেন (পৃ. ১২, ১৩) এবং একাত্তরের গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রে ওই সময়ে বাঙালিদের দ্বারা বিহারীদের হত্যার বিচার করা উচিত বলে দাবি করেছেন (পৃ. ৪১, ৪২)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তার এই ন্যাকারজনক ইতিহাস বিকৃতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ও তার এই গ্রন্থটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শিক্ষক সমিতি মনে করে, এ বিষয়গুলো ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় ও একাডেমিকভাবে সুরাহা হয়েছে। এগুলো নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরির সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ যেটি তিনি সমাপ্ত করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে। সেই ভাষণটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃত। সুতরাং জোনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ যে ‘জয় পাকিস্তান’ শ্লোগানের কথা বলছেন তা একদিকে যেমন ইতিহাস বিকৃতির অকাট্য প্রমাণ ঠিক একইভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃত ‘জয় বাংলা’ সম্বলিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে চ্যালেঞ্জ করার অপচেষ্টা। এদেশে একমাত্র ৭১-এর পরাজিত শক্তিই এসব নিষ্পত্তিকৃত বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিতর্কিত করা ও মহন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ তার গ্রন্থে একই অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে ৭১-এর পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবে কাজ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদালয় শিক্ষক সমিতি বিবৃতিতে, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে অনতিবিলম্বে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া ও তার গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে পণ্ডিত শিক্ষকদের সমস্বরে একটি তদন্ত কমিটি প্রণয়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছে। শিক্ষক সমিতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের বইের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও গণহত্যা সম্পর্কে অসত্য, বিকৃত ও উদ্ভট তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ এনে এর নিন্দা এবং আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাবি ছাত্রলীগ।