জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে (৫২ ব্যাচ) স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা চলতি বছরের ১৮ জুন শুরু হয়ে ২২ জুন শেষ হয়। ভর্তি পরীক্ষার পাঁচ মাস পর গত ৩০ নভেম্বর থেকে অনালইনে ক্লাস শুরু হয় এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের। হলে আবাসন সংকট থাকায় অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সংকট নিরসনের ব্যবস্থা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সশরীরে ক্লাস শুরু করার দাবিতে ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে অবস্থান কর্মসূচি ও নিজ বিভাগের সভাপতি বরাবর মৌখিক দাবি পেশ করেও কর্তৃপক্ষের সন্তোষজনক সাড়া না পেয়ে অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ২২টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে। এর আগে ১৫ জানুয়ারি এক সপ্তাহের মধ্যে আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে সশরীরে ক্লাস শুরু এবং সশরীরে ক্লাস শুরুর ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে কোনো প্রকার পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার (প্রশাসনিক) ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ৫২ ব্যাচের একদল শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান দ্রুত সময়ের মধ্যে সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ভঙ্গ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনলাইনে ক্লাস করতে তাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যারা গ্রামে থাকেন তারা দুর্বল নেটওয়ার্ক সংযোগের ফলে নিয়মিত ও স্বাচ্ছন্দ্যে ক্লাস করতে পারে না। ক্লাসে যেসব বই থেকে পড়ানো হয় সেসব বইয়ের পিডিএফ বা ‘সফট কপি’ না থাকায় পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া অনেকে আর্থিক অস্বচ্ছতার কারণে পর্যাপ্ত ডিভাইস ও ইন্টারনেট ডেটা কিনতে পারে না। ফলে তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২ ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনলাইনে চলমান রেখে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের (৫৩ ব্যাচ) ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ৫৩ ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা।
প্রথম বর্ষের এ শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনলাইনে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নবনির্মিত হলগুলো চালু করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেখানে আসন বরাদ্দ দিয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু করার মতো সক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নেই বলে মনে করেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস শুরু না হওয়ার কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সক্ষমতা দেখাতে পারছে না যে, তারা হলগুলো চালু করে সবাইকে আবাসন ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে তাদের সেই সক্ষমতা আছে কি না? আমরা মনে করি, নেই। গত দুই বছরের দৃষ্টান্ত তাই বলে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি অনতিবিলম্বে তারা তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করুক। অন্যথায় এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত।
সশরীরে ক্লাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. এমরান জাহান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের আগেও জানিয়েছে অনলাইনে ক্লাস করতে তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। আমরাও জানি তাদের অসুবিধার কথা। দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করবে এটা মানানসই নয়। তাছাড়া আমরা তাদের যেসব বই থেকে পড়াই সেসব বই সবসময় অনলাইনে পাওয়া যায় না। ফলে তারা পড়তেও পারে না। সশরীরে ক্লাস হলে তারা বিভাগের সেমিনারে বা গ্রন্থাগারে গিয়ে সেসব বই পড়তে পারে। এজন্য সশরীরে ক্লাস হওয়া জরুরি।’
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যেই নতুন হল চালু করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দিয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’