দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, স্কুলশিক্ষার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করি। তাই এই স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের মধ্যে শিক্ষায় সবচেয়ে কম বরাদ্দ হয় বাংলাদেশে। গণবিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক কিছু প্রতিষ্ঠানের কারণে এমন অবস্থা। আমাদের এই নতুন শিক্ষাক্রম অন্য দেশের শিক্ষাক্রম থেকে অনুবাদ করে চালানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করেছিলো। এর কোনো মূল্যায়নই তারা করেনি, বরং এই পদ্ধতি গাইডনির্ভরতা বাড়িয়েছে। খেলার মাঠ, গবেষণাগার, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতসহ আনুষঙ্গিক আয়োজন না করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) উদ্যোগে পাঁচ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করবে। মাঝখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। অনেক শিক্ষকই এই শিক্ষাক্রম চান না। কিন্তু তাঁরা ভয়ে বলতে পারছেন না। যারা চান না, তারা কী করে শিক্ষা দেবে? এগুলো নিয়ে সমালোচনা যৌক্তিক। কিন্তু সরকার কোনো সমালোচনা শুনতে চায় না। সরকার সমালোচনা পছন্দ করে না, তারা তোষামোদী পছন্দ করে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আগামী চার মাসব্যাপী পাঁচ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করবে। এ স্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি চলাকালে ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজনও থাকবে।
গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত রাখাল রাহা এবং বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা।
মোহাম্মদ আজম বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো সংকটের মধ্যে নিয়ে যাবে। এর বাস্তবায়ন অসম্ভব। এ শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানশিক্ষা থেকে পিছিয়ে দেবে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য অপ্রস্তুত করে তুলবে।
ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা বলেন, আগামী চার মাসব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহের কর্মসূচি চলমান থাকবে। এ কর্মসূচি চলাকালে তাঁরা বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষানুরাগী মানুষসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তাঁরা পৌঁছাবেন। এ আন্দোলন সফল করতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বানও জানান তারা।