প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ ছাত্র-জনতার সরকার। প্রথম ধাপে রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দেশের সকল নাগরিক আপামর জনগণের ব্যপক সমর্থন রয়েছে তা সহজেই অনুমেয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যতোটুকু সময় প্রয়োজন রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বার্থে ন্যূনতম ততোটুকু সময় দিতে দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের একটা মৌন সমর্থন রয়েছে অথবা সরকার সেই সময়টুকু আশা করছে তা ছাত্র-জনতা অনুধাবন করতে পেরেছে।
১. জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন গণহত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং নির্দেশ পালনকারীদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসবেন। ২. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য দফা এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সড়ক ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করবেন। ৩. চলমান আন্দোলনে জনগণের মধ্যে দানা বাঁধা ‘রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/আইন-কানুন/সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাস্কফোর্স গঠন এবং গণ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ৪. টাস্কফোর্স দ্বারা প্রস্তাবিত এবং গণ-আলোচনার মাধ্যমে উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহের সমন্বয়ে ‘সংবিধান সংস্কারের ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করবেন।
পরবর্তী নির্বাচিত সরকার যাতে সেই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকে তার ব্যবস্থা করবেন। ৫. সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সৃষ্টি করবেন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবেন। ৬. সংবিধান সংস্কার এবং সরকার গঠনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন এবং নির্বাচন শেষে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবিসমূহ পূরণসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বর্তমানে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্বাসনে সরকারের বিশেষ দৃষ্টিসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও রাষ্ট্র সংস্কারে বিশ্ব নেতাদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা সরকার অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়াও এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করতে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মারা অনেক ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কঠোর হস্তে তা দমন করতে পেরেছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতির চরম সংকট ও বিপর্যয় থেকে উত্তরণ হওয়ার চেষ্টায় প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টাদের দক্ষতা ও মেধা কাজে লাগিয়ে জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতায় সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।এ ছাড়া অফিস আদালতসহ সব দপ্তরে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো দলের কোনো ধরনের দলীয় চাপ বা প্রভাব খাটিয়ে দলীয় আধিপত্য বিস্তার করা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় সরকারসহ ছাত্রসমাজ বারবার সতর্ক করে আসছেন এবং এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ কিন্তু সরকারকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি রাষ্ট্র সংস্কারের এই মহাযজ্ঞে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরী ও জনগণের কল্যাণে আনার পাশাপাশি সরকারের অন্যতম লক্ষ্য নির্বাচন এবং যখন নির্বাচন আসবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার সেই ক্ষণ অনেক বছরের পর ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সেই নির্বাচনে মানুষ বুক ভরা আশা নিয়ে অংশগ্রহণ করবে এবং আশা করা যায় ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়তো এমন একটি নির্বাচন উপহার দিবেন, যে নির্বাচন হবে সর্বদলীয় নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু স্বচ্ছ অংশগ্রহণমূলক দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য শত বছরের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন।
লেখক: শিক্ষক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট, পঞ্চগড়