বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। যিনি ‘ট্রাজেডি কিং’ নামে সুপরিচিত, এবং সত্যজিৎ রায়ের মত কিংবদন্তি বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাতার মতে সর্বশেষ তিনি ছিলেন রচনাশৈলী একজন গুণী অভিনেতা।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে, দিলীপ কুমার ছবিতে অভিনয় থেকে পাঁচ বছর বিরতি নেন এবং ছায়াছবি ক্রান্তি প্রধান চরিত্রে অভিয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন এবং প্রধান চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যান। যেমন: ‘শক্তি’, ‘কর্ম’ এবং ‘সওদাগর’। তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ছিলো ‘কিলা’। দিলীপ কুমার অভিনেত্রী ‘বৈজয়ন্তীমালার’ সঙ্গে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেখানে তারা উভয়েই একসঙ্গে নিজেদের প্রযোজিত প্রতিষ্ঠান থেকে ‘গঙ্গা যমুনা’সহ সাতটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেন।
দিলীপ কুমার এর আসল নাম মুহাম্মদ ইউসুফ খান। তিনি পাকিস্তানের খাইবারে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লালা গোলাম সারওয়ার একজন ফলের ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি (মহারাষ্ট্র, ভারত) পেশোয়ার ও দেওলালীর মধ্যে ফলের বাগানের মালিক। তার মাতার নাম আয়েশা বেগম। দিলীপ কুমার নাসিকের কাছাকাছি মর্যাদাপূর্ণ দেওলিয়ার বার্নস স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে, ‘বম্বে টকিজ’ এর মালিকানাধীন অভিনেত্রী দেবিকা রানী ও তার স্বামী হিমাংশু রাই পুনের অন্ধ সামরিক ক্যান্টিনে দিলীপ কুমারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন এবং ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ‘জোয়ার ভাটা’ চলচ্চিত্রটির জন্য দিলীপকে প্রধান চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউড এ প্রবেশ করেন। তার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ ইউসুফ খান হলেও হিন্দি লেখক ভগবতি চরণ বর্মা তাকে স্ক্রীননেম দিলীপ কুমার দেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে দিলীপ কুমার বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারেন; যেমন: ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু এবং পশতু ভাষা।
দিলীপ কুমার এর প্রথম চলচ্চিত্র ‘জোয়ার ভাটা’ অলক্ষিত ছিলো যা তাকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছাতে সাহায্য না করলেও পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘নুর জাহানের’ বিপরীতে ‘জঙ্গু’ বক্স অফিসে তার প্রথম ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে। তার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসাসফল চলচ্চিত্র ছিলো ‘শহীদ’। তিনি বলেন, তিনি একটি ত্রিভূজ প্রেমের গল্পে রাজ কাপুর ও নার্গিস পাশাপাশি অভিনয় করেন যা মেহবুব খানের ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের আন্দাজ সঙ্গে তার যুগান্তকারী ভূমিকা পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ব্যবসা সফল বিয়োগাত্মক ভূমিকায় অভিনয় করেন; জোগান, দীদার, দাগ, দেবদাস, ইহুদী ও মধুমতি। তিনি মেহবুব খানের ‘অমর’ ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের একটি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছায়াছবিটি তাকে ‘ট্রাজেডি রাজা’ হিসাবে পর্দায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ‘দাগ’ চলচ্চিত্রটির জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেয়া প্রথম অভিনেতা ছিলেন এবং দেবদাস চলচ্চিত্রটির জন্য আবারো পুরস্কার প্রাপ্তির সামনে হাজির হন। তিনি নার্গিস, কামিনী কুশল, মিনা কুমারী, মধুবালা এবং বৈজয়ন্তীমালা-সহ সেই সময়ের শীর্ষ অনেক জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন।
দিলীপ কুমার ভারত ও পাকিস্তানের মানুষদের কাছাকাছি একসঙ্গে আনার প্রচেষ্টায় সক্রিয় ছিলেন। তিনি রাজ্যসভার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।
তাকে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে পাকিস্তানের সরকার দ্বারা প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার নিশান-ই-ইমতিয়াজ প্রদান করা হয়। তিনি দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।
বর্ষীয়ান এই ভারতীয় অভিনেতা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।