অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতরা মানসিক রোগী: হাইকোর্ট - দৈনিকশিক্ষা

অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতরা মানসিক রোগী: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অর্থ পাচারে যুক্ত থাকাদের মানসিক রোগী বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মতো বিষয়ে চুপ করে থাকাটা অন্যায় বলেও জানিয়েছে আদালত। আজ সোমবার (২১ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ‘একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কত অর্থ প্রয়োজন? কত অট্টালিকা দরকার? এত টাকার পেছনে কেন ঘুরবে? আমরা যদি সবকিছু দেখে চোখ বন্ধ করে থাকি, সেটা কাম্য নয়। কারণ, কথা না বলাটা অপরাধ।’ 

আইনজীবী আহসানুল করিম এ বিষয়ে আদালতকে বলেন, ‘কী উদ্দেশ্যে তিনি এই মামলায় পক্ষ হতে চান? এই মামলায় আদালতকে সহযোগিতা করতে পারেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সায়েদুল হক তো জনস্বার্থে (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) এটা করেননি। তিনি তো শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনেছেন। তিনি কোনোভাবেই এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পারেন না। আদালতে একই যুক্তি তুলে ধরেন সাইফুদ্দিন খালেদ।’

শুনানির একপর্যায়ে আদালত আইনজীবী আহসানুল করিমের কাছে জানতে চান, ‘সায়েদুল হক পক্ষভুক্ত হলে সমস্যা কোথায়?’ তখন আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ‘রুলের বিচারাধীন অবস্থায় এস আলম গ্রুপ-সম্পর্কিত বিষয়ে বিভ্রান্তিকার তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা ও আতঙ্ক তৈরি হয়। তাতে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কথা না বলাটা অপরাধ। সবাই যদি চুপ করে থাকি তাহলে তো হবে না। জেনেশুনে চুপ থাকা যাবে না।’

তখন আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা তো দেখবেনই।’ আদালত তখন বলেন, ‘এখন তো আগের যুগ নেই। একটা কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমরা মনে করি, আমাদের দায়বদ্ধতার ব্যাপার রয়েছে। যদি আমরা সবকিছু দেখে চোখ বন্ধ করে থাকি, সেটা কাম্য নয়। এটা অন্যায়।’

হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কাউকে হিউমিলিয়েট (হেয়প্রতিপন্ন) করার জন্য কোনো ভুল রিপোর্টিং হয়, যদি দেখা যায় ভুল রিপোর্ট হয়েছে, আমরা কাউকে ছাড়ার পাত্র নই।’

তখন আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সবার মঙ্গলের জন্যই করেন।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরে তা স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। আদালত আরও বলেন, ‘আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি বিচার করতে পারতাম; আমরা যা বলি তা করি কি না? মানুষের সামনে যা বলি, তা ঘরে করি কি না? যদি করতাম, তাহলে কি দেশের এই অবস্থা হয়? কত অট্টালিকা দরকার? কে কী মনে করল, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। শপথ নিয়ে লাভটা কী?’

এ পর্যায় আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ‘আপনাদের (বিচারপতি) এ ধরনের বক্তব্যে মানুষ উজ্জীবিত হয়।’ তখন আদালত বলেন, ‘একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কত অর্থের প্রয়োজন? এত টাকার পেছনে ঘুরতে হবে কেন?’

আদালত আরও বলেন, ‘রায় পক্ষে গেলে হেসে দেন। বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি রায় বলে সমালোচনা হয়।’ ফরমায়েশি রায়ের কথা শুনলে বিব্রত হন বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

শুনানির শেষ পর্যায়ে আইনজীবী সায়েদুল হক আদালতকে বলেন, ‘ভারতের আদানি গোষ্ঠী নিয়ে গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেটি খারিজ করে দিয়েছিলেন ভারতের প্রধান বিচারপতি। এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তিনি আদালতের নজরে আনেন।’ এ পর্যায় হাইকোর্ট সায়েদুল হকের উদ্দেশে বলেন, ‘পক্ষভুক্তি হওয়ার যে আবেদন, সেটি আমরা খারিজ করছি না। আপনার আবেদন নথিতে সংযুক্ত থাকবে। প্রয়োজন হলে আমরা আপনাকে ডাকব।’

সম্প্রতি বিদেশে এস আলম গ্রুপের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ তদন্তে হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত রুলে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তবে, পক্ষভুক্ত না করে ব্যারিস্টার সুমনের আবেদনটি নথিভুক্ত করে রাখেন হাইকোর্ট। এই আবেদনের শুনানির সময় আদালত থেকে এ কথা বলা হয়।

আবেদনটি নথিভুক্তির সময় এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘যারা অর্থ পাচারে (মানি লন্ডারিং) যুক্ত থাকে, তাদের মানসিক রোগ আছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মতো বিষয়ে চুপ করে থাকাটা অন্যায়। জেনেশুনে আমরা চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। দেশ ও জাতির স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। তবে, অন্যায়ভাবে কাউকে হেয় করার জন্য কিছু করা হলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।’

হাইকোর্ট বলেন, ‘ইদানিং দেখা যাচ্ছে, কোনো রায় কারও বিপক্ষে গেলেই কোর্টকে অ্যাটাক করে মন্তব্য করা হয়। বলা হয় ফরমায়েশি রায়। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’

আজ আদালতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। অপরদিকে, ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

এর আগে, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম বিদেশে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) মার্কিন ডলার পাচার করেছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত বলেছেন, ‘দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও সংক্ষুব্ধ।’

পরে, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

গত ৪ আগস্ট একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকে এস আলমের অর্থ পাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ প্রতিবেদনের বিষয়টি গত রোববার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন।

আদেশের পরে আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘দেশের সব আইন অমান্য করে দেশের বাইরে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছেন এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম এবং তার স্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে আমি আদালতের নজরে আনি। তখন আদালত এ বিষয়ে রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন।’

একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050728321075439