সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। অনুনোমদিত শাখায়ও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। রয়েছে অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগও।
জানা গেছে, জেলার শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল। ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এ স্কুলে লেখাপড়া করছে। ফলাফলের দিক দিয়ে রাজশাহী বোর্ডের শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের একটি এটি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ষষ্ঠ শ্রেণিতে দুই শিফটে অনুমোদিত দুটি করে শাখায় ৫৫ জন করে মোট ২২০ জন ছাত্র ভর্তির নিয়ম থাকলেও এ বছর ভর্তি করা হয়েছে ৪৮০ জন। অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। স্কুলের কাছে আরও একটি শাখার আবেদন করলেও অনুমোদন হয়নি। অথচ অনুনোমদিত সেই শাখায়ও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।
তিন শাখায় যত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির কথা, ১৫০ জন বেশি ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিতে ২৫ জোড়া করে বেঞ্চ রয়েছে। একজোড়া বেঞ্চে তিনজন করে ছাত্র বসার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রীর কারণে ৪-৫ জন করে শিক্ষার্থীকে বসতে হচ্ছে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ক্লাসে অতিরিক্ত ছাত্র থাকায় পাঠদানে ‘গ্যাঞ্জাম’ হয়। পড়া বুঝতেও কষ্ট হয়। বিশেষ করে যারা পেছনের দিকে বসে তারা কিছু শুনতে পায় না।
এসব বিষয়ে মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ বলেন, পারিপার্শ্বিক বিষয়ে আমাকে ভর্তি করতে হয়েছে। চাপ বেশি ছিল। সবারই আগ্রহ ছিল। এ কারণে বেশি ছাত্র ভর্তি হয়েছে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ- শাখা অনুমোদনের অপেক্ষায়। আরও একটি শাখার আবেদন করা হবে।
অতিরিক্ত ভর্তিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সুযোগ সন্ধানী একটি শ্রেণি আছে হয়তো তারা টাকা নিতে পারে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
স্কুলের একটি সূত্র জানায়, ভর্তি বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩৮০০ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে উন্নয়ন ফি ১৫০০, সেশন চার্জ এক হাজার, বেতন ৮০০, কল্যাণ তহবিল ২০০, পরিচয় পত্র ফি ৩০০। এ ছাড়া টাই ও ডায়েরি বাবদ আরও ৪০০ টাকা করে নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ৮ হাজার টাকা নেওয়ার কথা।
সূত্রটি আরও জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা ভর্তি ফি নেওয়ার কথা। কিন্তু উন্নয়ন ফি ও সেশন চার্জের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও উন্নয়ন কাজের জন্য এসব টাকা নেওয়া হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল ইসলাম বলেন, আমরা পার সেকশনে ৫৫ জন করে ২২০ জনকে ভর্তির কথা বলেছিলাম মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলকে। আমরা লটারির মাধ্যমে ২০০ জনকে ঘোষণা করেছিলাম। আর ২০ জন কোটার জন্য রাখা হয়েছিল। অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করাতে চাইলে সেকশন অনুমোদন করাতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেকশন খোলার অনুমতি নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা বলেন, আমি মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলটি পরিদর্শন করে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির বিষয়টি দেখেছি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।