সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা কেএসডি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদে নিয়োগে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেয়ার আগেই নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। অর্ধকোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়ায় পরীক্ষা হওয়ার আগেই কে কোন পদে চাকরি পেতে যাচ্ছেন তা প্রকাশ পেয়ে গেছে। গতকাল শনিবার (১৩ মে) এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক। তিনি নিযোগ বোর্ড বন্ধ করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, খেশরা কেএসডি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক, ল্যাব সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মীসহ মোট পাঁচটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় গত বছরের ২৯ নভেম্বর। প্রতিটি পদে মোটা অংকের টাকা ঘুষ লেনদেনের চুক্তি শেষে পছন্দের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৩ মে (শনিবার)। এদিন সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে গত ৪ মে প্রার্থীদের জানানো হয়।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে তিনজন, অফিস সহকারী পদে চারজন, ল্যাব সহকারী পদে চারজন, নিরাপত্তাকর্মী পদে ১০ জন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে পাঁচজনসহ পাঁচটি পদে মোট ২৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরপর যাচাই-বাছাইয়ে অফিস সহকারী পদে খায়রুল আলম নামের একটি আবেদন বাতিল হয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, অফিস সহকারী পদে সভাপতির এক ভ্রাতুস্পুত্র বিশ্বজিৎ দাশকে নির্বাচন করা হয়েছে। বাকি দুজন তার ডামি প্রার্থী। মূলত এ পদে কোরাম পূরণ করতে তাদের দিয়ে আবেদন করানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন দাশ ও সভাপতি পবিত্র মোহন বিশ্বাস পরস্পর যোগসাজশে এই নিয়োগ কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য আকরাম হোসেনসহ কয়েকজন অভিভাবক।
অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন করিব জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করে তদন্তের নির্দেশ দেন।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. আকরাম হোসেন অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে সভাপতি-প্রধান শিক্ষক যৌথভাবে প্রতিটি পদে লোক নিয়োগে রীতিমতো দরবার শুরু করেন। সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর্যায়ে চলে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থীর অভিযোগ, প্রতি পদে ১০ লাখ টাকা করে ডোনেশনের নামে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন কুমার দাশ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ১৩ মে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। কি কারণে বন্ধ হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে তিনি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো।
বিদ্যালয়ের সভাপতি পবিত্র মোহন বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নিয়োগে কোনো অর্থের লেনদেন হচ্ছে না। একটি মহল স্কুল ও কমিটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।