নাটোরের গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজের পিয়ন শাহাদত হোসেনের (৩৫) বিরুদ্ধে।
অশোভন আচরণের এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ পিয়নের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ছাত্রীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পিয়ন শাহাদত হোসেন জোর করে কলেজে ঢুকলে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে ছাত্রীদের রোষানলে পড়ে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলে দৌঁড়ে পালিয়ে রক্ষা পান পিয়ন শাহাদত হোসেন। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি তালাবদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। পরে অধ্যক্ষের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, পিয়ন শাহাদত হোসেন কলেজে দায়িত্ব পালনের পাশপাশি নৈশপ্রহরি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। দায়িত্ব পালনের সময় কলেজের আবাসিক এক ছাত্রীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে অন্য ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে কলেজ থেকে পিয়ন শাহাদত হোসেনের অপসারণ দাবি করে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কলেজের ছাত্রীরা। বিষয়টি আমলে এনে কলেজ শিক্ষক মায়ারানী চক্রবর্তীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত কমিটির প্রধান মায়ারানী চক্রবর্র্তী বলেন, ‘তদন্তে পিয়নের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি প্রমাণিত হয়। তাছাড়া ছাত্রীর সাথে গড়ে ওঠা সম্পর্কটি নিয়ে তার স্ত্রীও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই পিয়নকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করা হলেও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি পিয়ন শাহাদত হোসেন। এ কারণে তাকে ২২ দিনে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের একাধিক ছাত্রী গত বৃহস্পতিবার অভিযোগ করে বলেন, পিয়ন শাহাদত হোসেন একজন আবাসিক ছাত্রীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়ানোর পরও অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে অনুরূপ আচরণ করে আসছিলেন। এত অভিযোগের পর অধ্যক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। সর্বশেষ ছাত্রীদের গণস্বাক্ষর নিয়ে পিয়ন শাহাদতের অপসারণ দাবি করেন তারা।
গণস্বাক্ষরসহ একটি অভিযোগের কপি অধ্যক্ষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানা পুলিশ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দেয়া হয়েছে বলে জানায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। কলেজের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, একজন পিয়নের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও অধ্যক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কলেজের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তবে কেন কী কারণে অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সেটা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে শিক্ষক ও ছাত্রীদের মাঝে। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘নানা ব্যস্ততার কারণে অভিযোগটি আমলে নিতে বিলম্বিত হচ্ছে।তবে পরিচালনা কমিটিরসভা ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
ছাত্রীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে পিয়ন শাহাদত হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপূর্ণ এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।’
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, ‘কলেজের আভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানানো হয়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’