টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের ফাঁসির দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা শহরে।
শুক্রবার সকালে সচেতন নারী সমাজের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিলের পর জেলা শহরের নিরালামোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই বড় মনির ও তার ভাই এমপি ছোট মনিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা নিশ্চিত করে ফাঁসি দিতে হবে। যদি তাদের ফাঁসি না দেয়া হয় তাহলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত ১০ টার দিকে টাঙ্গাইল সদর থানায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরী। মামলায় বড় মনি ও তার স্ত্রী নিগার আফতাবকে আসামি করা হয়েছে। বড় মনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই। গত বৃহস্পতিবার ওই কিশোরী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কিশোরীর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে বড় মনির সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সমস্যা সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন এবং ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালতপাড়ায় ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে বড় মনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে কারও কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করতে তিনি নিষেধ করেন। প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা বড় মনিকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দেয়া হয়। সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ২৯ মার্চ রাত ৮ টার দিকে মনি তাকে আদালতপাড়ার বাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজি না হওয়ায় বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী কিশোরীকে মারধর করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। তাকে নানা হুমকিও দেয়া হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমানকে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। ২২ ধারায় আদালতে ওই কিশোরী জবানবন্দি দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কিশোরীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন। পরে তাকে তার ফুপুর জিম্মায় দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী বলেন, আমি বিচার চেয়েছি। ন্যায়বিচার পাবো বলে আমি আশা করি।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট লুৎফুন্নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড করা হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে কিশোরীর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
কনসালট্যান্ট লুৎফুন্নাহার বলেন, পরীক্ষার ফল ছাড়া ধর্ষণের বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না।
ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে।
প্রভাবশালী ও এমপির বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে শহরে সমালোচনার ঝড় বইছে।