বছরের প্রথম দিন মানেই নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাস। প্রতিবারের মতো এবারো নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাসে মাতবেন কোটি কোটি শিক্ষার্থী। প্রায় পৌনে চার কোটি শিক্ষার্থী নতুন বই পাচ্ছেন আজ। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের নতুন বই তুলে দিচ্ছে সরকার। স্কুল-মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে নতুন বই। এ জন্য সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বছরের প্রথম দিন প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির ৩ কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে নতুন বই পাবেন। শূন্য হাতে কোনো শিক্ষার্থীকেই নতুন ক্লাস শুরু করতে হবে
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার মাধ্যমে এ বছরের নতুন বই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আর স্কুল-মাদরাসায় উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে আজ। এজন্য উপজেলাগুলোতে ইতোমধ্যে নতুন বই পাঠানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মিরপুর-২ এর ন্যাশনাল সকাল-বিকাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় বই উৎসবের আয়োজন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেবেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন না পাওয়া মাধ্যমিকের কেন্দ্রীয় বই উৎসব হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকা (টিজি) বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ শিক্ষার্থী পাবেন ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮টি পাঠ্যবই। প্রাথমিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৬৯৭ পাঠ্যবই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ শিক্ষার্থী পাবেন ২ লাখ ৫ হাজার ৩১টি বই। এ ছাড়া মাদরাসার ইবতেদায়ি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ২ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৬ পাঠ্যবই। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ শিক্ষার্থী পাবেন ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭ পাঠ্যবই।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শতভাগ বই ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পৌঁছেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বইও। তবে, কিছু কিছু উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী অষ্টম ও নবম এ দুই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অনুশীলনী পাঠ ও অনুসন্ধানী পাঠ বই পৌঁছায়নি। কিছু বই এখনো ছাপা বাকি আছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, প্রাক-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তবে অষ্টম শ্রেণির ৮৮ শতাংশ বই ও নবম শ্রেণির ৮২ শতাংশ বই ইতোমধ্যে ছাপা হয়ে গেছে। অষ্টম ও নবম এ দুই শ্রেণির মোট ছয়টি বই এখনো সব ছাপা হয়নি। বইগুলো হলো নবমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অনুশীলনী পাঠ ও অনুসন্ধানী পাঠ এবং অষ্টমের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের অনুশীলনী পাঠ ও অনুসন্ধানী পাঠ। আসলে এ বইগুলোর পাণ্ডুলিপি আমরাই পেয়েছি ১৫ ডিসেম্বরের পরে সেজন্য ১ জানুয়ারির আগে বই ছাপার কাজ শেষ করা যায়নি। বড় প্রেসগুলো সময়মতো বই দিতে পারলেও কিছু প্রেস এখনো দিতে পারেননি। তবে তারা শিগগিরই বই দেবে বলে আশা।
তিনি আরো বলেন, সব বই উপজেলায় যায়নি বলে কোনো শিক্ষার্থী নতুন বইয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন না। প্রাক-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী প্রতিটি বিষয়ের বই হাতে পাবেন। তবে কিছু উপজেলায় অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছয় থেকে আটটি বই পাবেন।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়্যারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম গতকাল রোববার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বেশিরভাগ বই ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির শতভাগ বই চলে গেছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির কিছু বই বাকি আছে। পাণ্ডুলিপি দেরিতে হাতে পাওয়ায় কিছু বই ছাপতে দিতেই দেরি হয়েছে। তবে বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থী যাতে বই পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব শিক্ষার্থীর হাতেই এদিন নতুন বই থাকবে। তবে অষ্টম ও নবম শ্রেণির কোনো কোনো শিক্ষার্থী মোট ১১টি বইয়ের মধ্যে ছয়টি থেকে আটটি বছরের প্রথম দিনেই হাতে পাবেন। বাকি বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।