চলতি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে। বন্যার কারণে তিনটি বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ায় প্রথম দিনে আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসবেন। এগুলো হলো- ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী, যশোর, সিলেট ও দিনাজপুরে বোর্ড। এসব বোর্ডে ১০ লাখ ৪১ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী বাংলা প্রথমপত্রের মাধ্যমে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করবেন। আরা পিছিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি বিএম, বিএমটি, ভোকেশনাল ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষা আগামী ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে। ওই দিন আরো ৩ লাখ ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় বসবেন।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় শুরু হবে আট বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা। বেলা ১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলবে।
পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল সাড়ে নয়টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলছে, পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ৩০ মিনিট। আর সৃজনশীল পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ব্যবহারিকসহ বিষয়ের পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ২৫ মিনিট। আর সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। তবে, আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। এ পরীক্ষার নম্বর কমেছে। পরীক্ষা বিরতিহীনভাবে চলবে। বহুনির্বাচনী বা রচনামূলক অংশের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।
বোর্ডগুলো আরো জানিয়েছে, সকাল দশটায় অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাড়ে নয়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দশটায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেয়া হবে। সাড়ে দশটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে সৃজনশীল প্রশ্ন বিতরণ করা হবে। আর দুপুর দুইটার পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেড়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দুইটায় দেয়া হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। আর আড়াইটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেয়া হবে।
কলেজগুলোর মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রে তার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি ওএমআর ফরমে লিখে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মার্জিনের মধ্যে লেখা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না। পরীক্ষার্থীদের তত্ত্বীয়, বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক অংশে পৃথকভাবে পাস করতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রের উল্লেখিত বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রোগ্রামেবল বা প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মুঠোফোন নিয়ে আসতে পারবেন না।
এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। গতবছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫৬ জন বেড়েছে। ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি, ৯৮ হাজার ৩১ জন শিক্ষার্থী আলিম ও ১ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী এইচএসসি বিএম, বিএমটি ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ২ হাজার ৬৫৮টি কেন্দ্রে মোট ৯ হাজার ১৬৯ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। গত বছরের তুলনায় এবার ৯টি কেন্দ্র বেড়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমেছে ১২টি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩ লাখ ৯ হাজার ২৮৩ জন, রাজশাহী বোর্ডের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬০ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৫ জন, যশোর বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৩ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৬৭ হাজার ২৮৯ জন, সিলেট বোর্ডের ৮৩ হাজার ২২৪ জন, দিনাজপুরে বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৬৬১ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭৬ হাজার ৬৬১ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
আর আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৯৮ হাজার ৩১ জন। তাদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৬৩ জন ছাত্র ও ৪৪ হাজার ৯৬৮ জন ছাত্রী। ২ হাজার ৬৮টি মাদরাসার এসব শিক্ষাথী মোট ৪৪৯টি কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আর এইচএসসি বিএম, বিএমটি, ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১৭ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯ হাজার ৫৭৩ জন ও ছাত্রী ৪৩ হাজার ৯৬৮ জন। তারা ১ হাজার ৮৩৪টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৭৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোতে পরীক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরমধ্যে রচনামূলকে ৫০ নম্বর ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরমধ্যে ৭০ নম্বর রচনামূলক পরীক্ষা ও ৩০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
পদার্থবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, উচ্চতর গণিত প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মত বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিকসহ প্রতি পত্রের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরে। এরমধ্যে রচনামূলকে ৫০ ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। রচনামূলক অংশে প্রতিটি পত্রে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে। এরমধ্যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যক্তিকে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে, এরমধ্যে উত্তর করতে হবে ২৫টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ও ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে প্রতি পত্রে মোট পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর আর নৈর্ব্যক্তিকে থাকছে ৩০ নম্বর। রচনামূলক অংশে ১১টি প্রশ্ন থাকলেও উত্তর করতে হবে ৭টি প্রশ্নের। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যক্তিকে ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর করতে হবে ৩০টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।
বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। এরমধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ৩০ নম্বর। রচনামূলকে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি ও নৈর্ব্যক্তিকে ৩০ প্রশ্নের ৩০টিরই উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের রচনামূলক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। তবে এ তিনটি পত্রের এনসিটিবির প্রণয়ন করা মানবণ্টনে পরীক্ষা হবে।
তবে, আইসিটি বিষয়ে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরের। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ২৫ নম্বরের। লিখিত অংশে রচনামূলকে ৩০ নম্বর ও এমসিকিউতে ২৫ নম্বর থাকবে। রচনামূলকে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে, ৩টি উত্তর দিতে হবে। আর এমসিকিউ অংশে থাকবে ২৫টি প্রশ্ন, ২০টির উত্তর দিতে হবে। রচনামূলক পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ও বহুনির্বাচনী অংশে পরীক্ষা হবে ২৫ মিনিট।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।