শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ধ্বংস করতেই সরকারবিরোধী দলের ওপরে সহিংসতার দোষ চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীতে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশ আজকে এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। শত শত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এটাকে ঢাকার জন্য তারা নানারকম রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে। একদিকে সরকার বলছে, এ কাজ জামায়াত-শিবির করেছে, তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যদিকে আমরা দেখি তারা (সরকার) যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করছে তার ৮০ থেকে ৯০ ভাগের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এই রাজনৈতিক পরিচয়হীন শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে। সরকারের প্রতারণা আজকে পরিষ্কার। তারা অতীতের মতো এবারও সহিংসতার দায় চাপিয়ে আন্দোলনকে ধ্বংস করতে চায়।’
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবি করে আমরা একটা সমাবেশ অনুষ্ঠানের করার কথা বলেছিলাম। আজকে পুলিশ কোনোরকম ন্যুনতম আইন-কানুনের ধার না ধরে তারা যেভাবে পুরানা পল্টনে এলাকা ঘিরে রেখেছে, আগ্রাসী ভূমিকার মধ্য দিয়ে আমাদের সমাবেশ পণ্ড করার চেষ্টা করছে, আমাদের মাইক কেড়ে নিয়েছে, আমরা পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সকল বিরোধীদলগুলো আমরা নির্বাচনের আগের থেকেই এই সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি। বাংলার ঘরে ঘরে এই সরকারের পদত্যাগের ধ্বনি উঠেছে,এই লড়াইটা চালাতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার গণতন্ত্র মঞ্চ সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এখন সরকার শুধুমাত্র টিকে আছে প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকারের ভাগ্য এখন চিকন সুতার ওপরে ঝুলছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের পেশাদার বাহিনী তারা যদি কেবল পেশাদারি দায়িত্ব পালন করে এই সরকারের পালিয়ে যাবার আর কোনো পথ পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সংকটটা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেন। রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হলে আপনারা পদত্যাগ করেন, পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে আলাপ-আলোচনার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ আপনারা তৈরি করতে পারেন। সরকার যদি সেই পথে না হাটের তাহলে যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে, মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তাদেরকে টেনে নামাতে বাধ্য করবে।’
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা গণঐক্য তৈরি করেন। সকল বিরোধীদলের কার্যকর ঐক্য তৈরি করেন। সমগ্র শ্রেণিপেশার মানুষ ভয়কে জয় করেরাজপথে নামতে শুরু করেছে। এই সংগ্রামে এবার বাংলাদেশের মানুষ বিজয় হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় হবে, দেশকে রক্ষা করব, দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে আমরা রক্ষা করব।’
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘এই সরকার একটা শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের জেদ, নিজের অসহিষ্ণুতা, নিজেদের ভেতরকার যে স্বৈরাচারী চরিত্র সেই সমস্ত কিছুর একটা আক্রোশ তারা করতে গিয়ে আজকে সমস্ত আন্দোলনকে একদিকে অপমানিত করেছে। তারপরে তাকে ভয়ংকর রকমভাবে দমন করার চেষ্টা করেছে, যা একাত্তর সালের পরে এদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদেরকে, আমাদের শিশু সন্তানদেরকে বাড়িতে গুলি করে এভাবে হত্যা করার কোনো নজির আমরা দেখিনি। আজকে শত শত শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই, এসব হত্যার বিচার চাই, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে।’