বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশের ফেব্রুয়ারি’ গানের স্রষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্মদিন আজ। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় মাদরাসায়। উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি হাইস্কুলে ভর্তি হন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে এই হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে অনার্স পাস করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবার মৃত্যুর পর তাকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বরিশাল শহরে তিনি কিছুদিন একটি মার্কসবাদী দল আরএসপি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘সওগাত’ পত্রিকায়।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশিত হলে তিনি অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের ‘মাসিক সওগাত’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন গাফফার চৌধুরী। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ‘জেহাদ’-এ বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’র সম্পাদক হন। পরের বছর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন এবং ‘অনুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। এরপর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে ‘নতুন দিন’ পত্রিকা বের করেন। এরপর ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ‘পূর্বদেশ’বের করেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ নাটক ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্যের বই চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান, নাম না জানা ভোর, নীল যমুনা, শেষ রজনীর চাঁদ।
সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এছাড়া তিনি একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, স্বাধীনতা পদকসহ প্রচুর পুরস্কার-পদক লাভ করেন।
তিনি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
