আবারো বাংলাদেশকে নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভকালে মৃত্যু, গ্রেফতার এবং দমনপীড়ন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে তাগিদ দিয়েছে সংগঠনটি। এর আগেও বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছিল অ্যামনেস্টি। সর্বশেষ গত ১৮ সেপ্টেম্বর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিবৃতি দেয় সংগঠনটি।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসামিন কাভিরত্নে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের বিরুদ্ধে তীব্র দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ভিন্নমত পুরোপুরি দমনের এটি একটি উদ্যোগ বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের স্মরণ রাখা উচিত যে, ভিন্ন মত পোষণ কোনো অপরাধ নয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ করার প্রত্যেকের অধিকারের প্রতি তাদের অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে বারবার হত্যাকাণ্ড, গ্রেফতার এবং দমনপীড়ন মানবাধিকারের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দেওয়ার পরিবর্তে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বন্ধে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আরো একবার আহ্বান জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ইয়াসামিন কাভিরত্নে আরো বলেন, যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার অনুসন্ধান করছে পুলিশ। এই তদন্ত পক্ষপাতিত্বহীন, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করে দায়ী ব্যক্তিদের সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে ব্যবহার করা এড়িয়ে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তেজনা বাড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকারকে এসব উত্তেজনা প্রশমনে যথাযথ সব ব্যবস্থা নিতে হবে। যখন খুব বেশি প্রয়োজন হবে তখনই শক্তি প্রয়োগের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কঠোরভাবে যেন সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো মানুষ যেন শারীরিকভাবে আর কোনো ক্ষতির শিকার না হন এবং সংকট বৃদ্ধি না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের একদফা দাবিতে শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি ও আরামবাগে জামায়াত মহাসমাবেশ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এতে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এরপর ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত। হরতাল শেষে সারা দেশে মহাসড়ক, রেল ও নৌপথে তিন দিনের (৩১ অক্টোবর ভোর থেকে ২ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বিরোধী দলের সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ চলাকালে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের পর থেকেই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটি এই তাগিদ দিয়েছে।