প্রতিবছর ঘটা করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কাজে নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি এ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রস্তাব পেশ করেন জেলা প্রশাসকরা। অনেক প্রস্তাবের সঙ্গেই নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি এসব প্রস্তাবের বেশিরভাগই জনগুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের নিজেদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথাও থাকে প্রস্তাবে। বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো আমলে নিয়ে সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগকে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাস্তবায়িত হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে যায় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রস্তাব। গত কয়েক বছরের ডিসি সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
এবারের তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন আগামী মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এবারের সম্মেলনে ২৬টি অনুষ্ঠান, অধিবেশন ও কার্য-অধিবেশন থাকবে। রাষ্ট্রপতি ও
স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজে অংশ নেবেন ডিসিরা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও নৈশভোজে অংশ নেবেন তারা। তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গেও ডিসিদের একটি অধিবেশন রয়েছে। সম্মেলনে ৬৪ জেলার ডিসি এবং ৮ বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। ডিসি সম্মেলনের কার্য-অধিবেশনগুলো রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মকর্তারা জানান, গত বছর ডিসি সম্মেলনে ২৬৩টি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডিসিরা। এসব প্রস্তাব থেকে ২৪২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত এক বছরে এসব সিদ্ধান্তের ১৭৭টি বাস্তবায়ন হয়েছে। ৬৫টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অর্থাৎ মোট সিদ্ধান্তের ২৭ শতাংশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসি সম্মেলনের স্বল্পমেয়াদি ৭২টি সিদ্ধান্তের ৫৮টি বাস্তবায়ন হয়েছে। ১৪টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নের হার ৮১ শতাংশ। মধ্যমেয়াদি ১০৫টি সিদ্ধান্তের ৭৭টি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ২৮টি সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনি। মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৩ শতাংশ। আর দীর্ঘমেয়াদি ৬৫টি সিদ্ধান্তের ৪২টি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার। ২৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
গতবারের সম্মেলনে রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে জমির পরিমাণ/ স্থানীয় বাজারমূল্যের ওপর স্ল্যাবভিত্তিক ডিসি আর ফি নির্ধারণ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার। এ প্রস্তাব বাস্তবায়নকারী ভূমি মন্ত্রণালয় অগ্রগতি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে জমির পরিমাণ ও শ্রেণির ওপর ভিত্তি করে ভূমি উন্নয়ন কর আরোপ ও আদায় করার লক্ষ্যে ভূমি উন্নয়ন কর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই আইনটি এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। অবশ্যই বাস্তবায়নের এ অগ্রগতি বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রমাণক চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। হাট-বাজার সম্প্রসারণে অধিগ্রহণ বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাট-বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) ২০২২-এর ধারা-৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭-এর বিধান অনুযায়ী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত তারিখ হতে যে কোনো হাট-বাজারের দখল গ্রহণ করতে পারবে। কোনো হাট ও বাজার সম্পর্কিত বিষয়ে উপ-ধারা (১)-এর অধীন প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার তারিখ থেকে উক্ত হাট বা বাজার দায়মুক্তভাবে সরকারের কাছে ন্যস্ত হবে। আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক নীতিগতভাবে এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ কর্তৃক ভেটিং শেষে সংসদে পাস হয়েছে। পাস হওয়া আইনের প্রমাণক চেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জলমহালের নীতিমালায় ‘নিকটবর্তী’ মৎস্যজীবী সমিতির সংজ্ঞা সঠিকভাবে না থাকায় এ বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্টীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ সংশোধনপূর্বক সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০১৮ (প্রস্তাবিত) প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত নীতিতে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সংশোধন করে পুনরায় পাঠাতে বলেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী খসড়াটি সংশোধন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রাথমিক মতামত দিয়ে সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে ভূমি-সংক্রান্ত সেবা প্রদান কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পাদন ও সমন্বয়ের স্বার্থে ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনাকে একই ছাতার নিচে আনার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তা বাস্তবায়নে সমস্যা চিহ্নিত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি নিবন্ধন কার্যক্রম আইন এবং বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন। যতক্ষণ পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক লিংক আপ আনয়ন করা সম্ভব না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত সমন্বিত ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড পদ্ধতি কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে মনে করছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
পানির লবণাক্ততা রোধে গোপালগঞ্জের বিল রুট ক্যানেলের মধুমতি নদীর নিকটবর্তী এলাকায় লবণ পানির প্রবেশ রোধে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য ‘পূর্ব গোপালগঞ্জ সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পটি এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।