আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই)। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে সন্দীপের।
এমনই পর্যবেক্ষণ ভারতের নিম্ন আদালত শিয়ালদহ কোর্টের। শুধু সাবেক অধ্যক্ষ নয়, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশকর্তা অভিজিৎও ফাঁসির মতো কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারেন বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ দুজনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক। তাদের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। শুনানি চলাকালীন বিচারক জানিয়েছেন, দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। শিয়ালদহ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অভিজিৎ টালা থানার পুলিশকর্তা ছিলেন। সন্দীপ একজন চিকিৎসক। তাই তাদের সামাজিক অবস্থান এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তাই অভিযুক্তদের জামিনে মুক্তি দেওয়া উচিত হবে না। পাশাপাশি সিবিআই-এর আবেদনে দুজনের পলিগ্রাফ এবং নারকো পরীক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আরজি কর কাণ্ড ৫০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও তদন্ত চলছে। ফলে বিচার পায়নি নির্যাতিতার পরিবার। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে দুই বার স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। শেষ শুনানিতে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পড়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
বিচারপতি জানিয়েছিলেন, সিবিআই রিপোর্টে যা দিয়েছে, তাতে আমরা অত্যন্ত বিচলিত। প্রধান বিচারপতি আরও বলেছিলেন, আরজি করের তদন্ত এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। এ ঘটনায় সত্য উদ্বঘাটনে সিবিআইয়ের আরও সময় লাগবে এবং তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
তবে পিছিয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির তারিখ। রাজ্য সরকারের তরফে শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। রাজ্যের তরফে আইনজীবী আস্থা শর্মা আবেদন জানিয়েছিলেন, ২৭ তারিখের বদলে শুনানি হোক ৩০ সেপ্টেম্বর। তাতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ছিল, শুনানি পিছানোর ব্যাপারে সবপক্ষের আইনজীবীর মতামত জানা জরুরি। এরপর সব পক্ষের মত নিয়েই শুনানির তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ঠিক করা হয়েছে। ওই দিন মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এই মামলায় নির্যাতিতার পক্ষে রয়েছেন ২০০ জন আইনজীবী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে লড়ছেন ২৯ জন আইনজীবী।
গত ৯ আগস্ট হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে নারী এক চিকিৎসকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তাকে ধর্ষণ এবং নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে যায়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য সঞ্জয় রাইকে আগেই গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সিবিআই পরে গ্রেফতার করেছে হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার পুলিশকর্তা অভিজিৎ মণ্ডলকে। এখনও আরও কয়েক জনের ব্যাপারে তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই।