রাজস্ব প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় আগামী অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটছে সরকার। প্রথমে মনে করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যার আকার হবে পৌনে আট লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, অর্থবছরের শেষ দিকে এসে দেখা গেলে বড় বাজেট তৈরি করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ সঙ্কুলান করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে নির্বাচনী বছরের বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হবে না। কারণ এই সময় শুল্ক হার বৃদ্ধি যতটা সম্ভব কম করা হবে। ফলে সরকারের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজটি যে সংস্থাটি করে থাকে সেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের(এনবিআর) পক্ষে বড় বাজেটের অর্থ জোগান দেয়া আদৌ সম্ভব হবে না। তাই আগামী অর্থবছরের জন্য একটি মাঝারি আকারের বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
ফলে আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যা কি না চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১১ ভাগ বেশি। আবার সংশোধিত বাজেট থেকে এর আকার বাড়বে ১৪ ভাগ। কিন্তু গত অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়েছিল পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৪ ভাগ বেশি।
আগামী বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসাবে এই ঘাটতির পরিমাণ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা ছিল সাড়ে ৫ সংশোধিত বাজেটে এই ঘাটতি ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্যগুলো পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হতে পারে। সম্পূর্ণ ভার্চুয়ালি এই সভাটি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় সভা। প্রথম সভাটি গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়।
এ দিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির একই হার নির্ধারিত রয়েছে। জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সাড়ে ৬ ভাগে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
এ দিকে, কালকের সভা সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রাক্কলিত একটি আকার নির্ধারণ করা হবে। এটিই চূড়ান্ত আকার নয়। এর পর আগামী মে মাসের ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আলোচনা করবেন। আর সেখানেই আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রকৃত আকার নির্ধারণ করা হবে।
জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন আগামী অর্থবছরের বাজেট ও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির একটি সার্বিক চিত্র তুলে ধরবেন। এর সাথে দেশের মুদ্রাবাজারসহ আরো কিছু বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। দেশে রফতানি বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে পারেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান উপস্থিত থাকতে পারেন।