শাহাব উদ্দিন। বয়স ৩৫ বছর। পেশায় একজন মাদরাসাশিক্ষক। শিক্ষকতা ছাড়াও পাঁচ স্থানে ব্যাচ আকারে দেন নূরানি কোরআন শিক্ষা। প্রতিটি ব্যাচে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন করে ছাত্রছাত্রী। পরিবারে আছে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ এক ছেলে। শিক্ষকতা, সংসার, আরবি পাঠদান সবকিছু সামলিয়ে মাত্র দুই মাস ১৪ দিনে নিজ হাতে লিখেছেন পুরো ৩০ পারা পবিত্র কোরআন শরিফ।
রীতিমতো এলাকাবাসীকে অবাক করে দিয়েছেন তিনি, যা নিয়ে এলাকার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য লোক। শাহাব উদ্দিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গামরিতল এলাকার মৃত বদিউল আলমের ছেলে।
এ বিষয়ে শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালটা আমার জন্য সুখের এবং দুঃখের। ছোট থেকে খুব ইচ্ছা বাইতুল্লাহ ও নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক দেখার। আল্লাহর অশেষ রহমতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মা-বাবাকে নিয়ে ওমরা হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যায়। কিন্তু ওমরা হজ পালন শেষে বাড়ি ফেরার ১১ দিনের মাথায় হারিয়ে ফেলি জন্মদাতা বাবাকে। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার তাহসিন আলম নামের এক কিশোর ৩০ পারা কোরআন স্বহস্তে লিখেছেন। তাই আমারও ইচ্ছা জাগে নিজ হাতে ৩০ পারা কোরআন লিখতে।
তিনি বলেন, চলতি বছরের আগস্ট মাসের ৪ তারিখ থেকে শুরু করি কোরআন লেখা এবং শেষ হয় অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখ। মোট দুই মাস ১৪ দিন সময় লেগেছে ৩০ পারা কোরআন লিখতে। প্রতিদিন ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় এই কোরআন শরিফ লিখতে ব্যয় করতাম। কখনো কখনো কোরআন শরিফটি লিখতে লিখতে কখন যে রাত ২-৩ টা বেজে যেত টের পেতাম না।
কোরআন শরিফটি লিখতে এ ফোর সাইজের ৬১১ পৃষ্ঠা কাগজ ও ৪২টি কলম ব্যবহার করেছেন শাহাব উদ্দিন। কোরআন শরিফের প্রতি পারা সুন্দর করে সবুজ রঙের পেপার দিয়ে পাণ্ডুলিপি করেছেন।
শাহাব উদ্দিন বলেন, আমার লেখা স্বহস্তে পবিত্র কোরআনটি আমার জন্মদাতা বাবাকে উৎসর্গ করছি।
শীতলপুর গাউছিয়া ইসলামে দাখিল মাদরাসার মাওলানা ইব্রাহিম খলিল বলেন, মাত্র দুই মাস ১৪ দিনে নিজ হাতে কোরআনটি লেখা আসলেই আমার কাছে বিস্ময়কর। সংসার, শিক্ষকতা, এলাকার বিভিন্ন স্থানে নূরানি শিক্ষার ব্যাচ পড়িয়ে কীভাবে এত দ্রুত নিজ হাতে কোরআনটি লিখল সেটি আসলেই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। আমি তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।