নরসিংদীর শিবপুরে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিদায় সংবর্ধনা শেষে তিনি শিবপুর ত্যাগ করেন। তার বিদায়ের সংবাদে গোটা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএনও জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছলে গত ২৮ আগস্ট তাকে অনত্র বদলি করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইউএনও শিবপুর থেকে নরসিংদী আসার পথে গত ১২ সেপ্টেম্বর সৈয়দনগর এলাকায় দুর্ঘটনায় পতিত হন। গাড়ির সামনের অংশ ধুমড়ে মুচড়ে গেলেও অক্ষত থাকেন তিনি। গত এক বছরে এই ইউএনও চারজন চালক দিয়ে তার গাড়ি চালিয়েছেন। এরই মধ্যে একজন চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন এবং আরেজনকে বরখাস্ত করেছেন তিনি। সম্প্রতি অ্যাকসিডেন্ট করায় কামাল নামে আরও একজনকে গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখেন তিনি।
ইউএনওর বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান তাপসি রাবেয়া বলেন, কোনো রেজ্যুলেশন ছাড়াই ইউএনও চেকবইয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন। রেজ্যুলেশন ছাড়া চেকবইয়ে সই করতে অস্বীকৃতি জানালে সরকারি প্রোগ্রাম কৃষিমেলায় দাওয়াত করা হয়নি আমাকে। এ খবর শুনে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রধান অতিথি হয়েও কৃষি মেলায় উপস্থিত থাকেননি। উপস্থিত থাকেননি উপজেলা চেয়ারম্যানও।
তাপসি রাবেয়া আরও জানান, রেজ্যুলেশনে ছাড়া ১৫ লাখ টাকার চেকে সই না দেওয়ার কারণে ইউএনও তাকে ছাড়াই একাই সভা-সমাবেশ করছেন। তার নানা অনিয়ম, কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ ছিলেন উপজেলা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহাসিন নাজির বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা অনেক বেশি। উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ মারা যাওয়ার পর তিনি কাউকেই গ্রাহ্য করেননি। উপজেলা আইন-শৃঙ্খলার সভাসহ কোনো সভায় কাউকে সম্মান দেওয়া বা কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কাগজে-কলমে নিজেই সভা শেষ করে দিতেন। ’
তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ডেকে এনে সতর্ক করা হয় বলেও জানা গেছে। তার স্বামী কোনো সরকারি চাকরিজীবী না হলেও যত্রতত্র ইউএনওর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
ড্রাইভার কামাল জানান, জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই ইউএনও এবং তার স্বামীর রাতে দিনে দুজনের ডিউটিই করতে হয়েছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে রাতে দুই/তিনদিন ইউএনওর স্বামীকে নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে গিয়েছি। সেখানে তার অফিস রয়েছে।
এদিকে সাত মাস ধরে বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ইউএনওর আরেক চালক রুবেল।
তার বিরুদ্ধে ইউএনওর লিখিত অভিযোগ, সে নাকি বেয়াদবি করেছেন। এমন অভিযোগের লিখিত জবাব দিলেও গত সাত মাস ধরে বেতনভাতা পায় না বলে জানিয়েছেন গাড়ি চালক রুবেল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পর্কে স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন বলেন, বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক। খুব শিগগিরই বিষয়গুলো আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করব এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করব।
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও জিনিয়া জান্নাতের মোবাইলে কল দেওয়া হয়। তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নন বলে ফোন কেটে দেন।
এদিকে ইউএনওর বিদায়ের সংবাদে গোটা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।