পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে ‘পিএইচডি বৃত্তি’ চালু করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অনেক শিক্ষক বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি অর্জন না করেই দেশে ফেরেন। কেউবা পড়াশোনা শেষে স্থায়ী হন বিদেশে। পিএইচডি বৃত্তিধারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে একটি নীতিমালাও করেছে ইউজিসি। নীতিমালায় বিদেশে গিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন না হলে অথবা কোর্স বাতিল করলে বৃত্তির অর্থ ফেরতের বিধান রাখা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে বৃত্তির সর্বোচ্চ মেয়াদ তিন বছর। তবে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য বৃত্তি দেওয়া হবে। ডিগ্রি অর্জনের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলে বৃত্তি নবায়ন করা হবে। যুক্তিসংগত কারণে ডিগ্রি অর্জিত না হলে তত্ত্বাবধায়কের সুপারিশে সর্বোচ্চ ১২ মাস মেয়াদ বাড়ানো যাবে।
কবে নাগাদ বৃত্তি চালু হবে এমন প্রশ্নে ইউজিসিসচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘আশা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পিএইচডি বৃত্তি প্রদান শুরু হবে। ইতিমধ্যে সরকার এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, এখন নীতিমালাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
নীতিমালা অনুযায়ী বৃত্তির অর্থ দেওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করবে ইউজিসি। এতে ডিগ্রি অর্জন না হলে কীভাবে অর্থ আদায় হবে তা নির্দিষ্ট করা থাকবে।
অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো কারণে গবেষকের বৃত্তি বাতিল হলে সমুদয় অর্থ গবেষকের নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাচুইটি, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা থেকে সমন্বয় করা হবে। এর বাইরে পিএইচডি অর্জনের সময়কাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন কর্মরত থাকতে হবে—বৃত্তি পাওয়ার শর্ত হিসেবে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।
বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পিএইচডি অর্জনের ক্ষেত্রে নীতিমালা তৈরিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাবিদ ও গবেষক তৈরির জন্য বিদেশের উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে দেশের জনগণের অর্থ যেন অপচয় না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. ইকরামুল কবির বলেন, আন্তর্জাতিক মানের গবেষক তৈরিতে বিদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান প্রয়োজন। এ জন্য রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে, তবে পরে যেন এ ডিগ্রি দেশের কাজে লাগে তা নিশ্চিত করাও জরুরি।
পিএইচডি ডিগ্রিসংক্রান্ত ইউজিসির নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, সবার প্রতি অনুরোধ, বিদেশ থেকে অর্জিত জ্ঞান দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে।
নীতিমালায় শিক্ষকেরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, বৃত্তি বাবদ কত টাকা পাবেন তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বনামধন্য র্যাঙ্কিং সংস্থা কিউএস, টাইমস বা গার্ডিয়ানের র্যাঙ্কিং তালিকায় বিশ্বের প্রথম ২০০-এর মধ্যে রয়েছে কিংবা শত বছরের পুরোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রার্থী এই বৃত্তির সুযোগ পাবেন। তবে ইউজিসির সঙ্গে চুক্তি আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নে সুযোগ পেলে বৃত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
নীতিমালায় বৃত্তির অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মোট তিনটি শ্রেণি করা হয়েছে। ক শ্রেণির অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপীয় দেশসমূহ, জাপান ও সিঙ্গাপুরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে মাসে ১ লাখ; খ শ্রেণির—রাশিয়া, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮০ হাজার; গ শ্রেণির—ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও তুরস্কে ৫০ হাজার টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হবে। পিএইচডি পড়তে যাওয়াদের সরাসরি রুটে একবার যাওয়া-আসার বিমানভাড়াও দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, সম্প্রতি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে বৃত্তি প্রদানসংক্রান্ত একটি নীতিমালা করা হয়েছে। এতে ডিগ্রি অর্জন শেষে যেন শিক্ষকেরা দেশের সেবায় নিয়োজিত হন, সে জন্য বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে।