ইউরিন থেকে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে কালা জ্বর শনাক্তের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষকদল।
সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষকরা তথ্য জানান।
গবেষক মনজুরুল করিম জানান, এর আগে কালা জ্বর নির্ণয়ে রক্তের কালচার এবং যকৃত, অস্থিমজ্জা বা প্লীহা থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হতো, যা সময় সাপেক্ষ এবং কিছুটা যন্ত্রণাদায়ক।
তিনি জানান, নতুন এই পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় করতে যেমন সময় কম লাগবে, তেমনি ব্যথা ছাড়াই শতভাগ রোগ নির্ণয় সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্য গবেষকরা জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় কালা জ্বর রোগের প্রকোপ বেশি। বিএমআরসির অনুমোদনসহ এই রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য সাত বছর সময় ব্যয় হয়েছে। সাধারণ মানুষ যেন এই সুবিধা নিতে পারেন সেজন্য দ্রুতই এই পদ্ধতি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে প্রচলনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কালা জ্বর কী
কালা জ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবি এই রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড় দ্বারা এটি বিস্তার লাভ করে। পরজীবি ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ, ম্যালেরিয়ার পরেই এর স্থান। ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিসে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
পরজীবিটি মানুষের যকৃত, প্লীহা এবং অস্থি মজ্জাতে সংক্রমন ঘটায় এবং চিকিৎসা না দিলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত।
লক্ষণ
এই রোগের লক্ষণ হলো, জ্বর, ওজন হ্রাস, ক্ষত, অবসাদ, রক্তাল্পতা, চামড়া কালচে হওয়া এবং যকৃৎ ও প্লীহার ব্যাপক আকার বৃদ্ধি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কালা জ্বর এইচআইভি সহসংক্রমণের আবির্ভাব নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে।
বিস্তার
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রোগটি আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। সমগ্র পৃথিবীর প্রতি দশটি কালাজ্বর রোগির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান এই চারটি দেশে বিদ্যমান। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের 'মানুষ' এই রোগের উৎস রূপে চিহ্নিত হলেও চীন ও ব্রাজিলে 'কুকুর' এই রোগের উৎস। বাংলাদেশের ৪৬ টি জেলায় কালাজ্বর দেখা যায়, এর মধ্যে ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুর অঞ্চলে এই রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা মাটির ঘরে বাস করে বা গোয়ালঘরের আশে পাশে থাকে তারাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ বেলেমাছি বাস করে মাটির ফাটলে বা আবর্জনার নিচে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া